বিশ্বের যে ৭ দেশে মার্কিন সেনারা সবচেয়ে বেশি তৎপর

গত অক্টোবর মাসে আফ্রিকার দেশ নাইজারে ওঁৎপেতে থাকা গুপ্তঘাতকদের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের চার সেনা নিহত হয়েছেন। মার্কিন জনগণ এই খবরে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে থাকে- পশ্চিম আফ্রিকার ছোট এই দেশটিতে মার্কিন সেনারা ঠিক কী করছিল?

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকা ১৮০ দেশে দুই লাখ সামরিক কর্মচারী নিযুক্ত করেছে বলে জানা যাচ্ছে।-খবর বিবিসি বাংলা অনলাইন।

কিন্তু মাত্র সাত দেশে মার্কিন বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে সামরিক অভিযানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সম্প্রতি খবর দিয়েছে। কোন সাত দেশে তারা তৎপর?

আফগানিস্তান

আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সৈন্য সংখ্যা ১৩ হাজার ৩২৯ জন। ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসির ওপর হামলার পর তালেবানের সঙ্গে লড়াই করার জন্য এদের পাঠানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি হচ্ছে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অফিস থেকে কংগ্রেসের জন্য তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকার প্রয়োজন এই কারণে যে সেই দেশকে নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালাতে না পারে।

আমেরিকান সেনারা আফগানিস্তানে আল কায়েদা, তথাকথিত ইসলামিক স্টেটগোষ্ঠী, তালেবান এবং তার বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।

ইরাক

ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার সামরিক সাফল্যের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে তার মূল লক্ষ্যে পরিবর্তন আনছে। লড়াই থেকে সরে এসে তারা তাদের সাফল্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসে মার্কিন সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আইএসের উপগোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে।

এর কারণ হচ্ছে- প্রাণঘাতী হামলার চালানোর ক্ষমতা এই দলগুলোর রয়েছে। এরা ইরাকের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে বড় হুমকি।

ইরাকে লড়াইয়ের পাশাপাশি মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরাকি বাহিনী, কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীকেও অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

সিরিয়া

যুক্তরাষ্ট্র তার অনুগত সামরিক জোটকে নিয়ে ২০১৭ সালে ইরাকে অভিযান চালিয়ে আইএসের কবল থেকে ৪৫ লাখ লোককে মুক্ত করে। এর পর থেকে আইএস ইরাক এবং সিরিয়ায় তার দখলে থাকা ৯৮ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারায়।

সিরিয়ায় এখন ১৫০০ মার্কিন সেনা তৎপর রয়েছে। এরা সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফকে নানা ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বোমাবর্ষণ করা, স্থানীয় বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা।

ইয়েমেন

মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কিছু বোমাবর্ষণ করছে। আল কায়েদা ইন দি অ্যারাব পেনিনসুলা বা অ্যাকাপের বিরুদ্ধে তারা কিছু লড়াই চালিয়েছে। মার্কিন সরকার স্বীকার করেছে যে ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে তারা সীমিত পর্যায়ে সামরিক সমর্থন দিয়েছে।

এ সাহায্যের মধ্যে রয়েছে- গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা এবং জোটের বাহিনীগুলোকে সামরিক সরঞ্জাম প্রদান করা। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে না।

সোমালিয়া

সোমালিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সেনা সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। ওই দেশে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে- ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাসবাদী হুমকি মোকাবেলা করা। দেশটিতে ১৯৯৩ সালে মার্কিন সেনারা এক চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল।

মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস সে সময় যুদ্ধবাজ নেতা মোহামেদ ফারাহ্ আইদিদের একজন ডান হাতকে পাকড়াও করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। অভিযানে ১৮ জন মার্কিন সেনা নিহত, ৭০ জন আহত এবং দুটি ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা সোমালিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতায় পরামর্শ দিচ্ছে।

লিবিয়া

সরকারিভাবে লিবিয়ায় মার্কিন সেনা সংখ্যা সীমিত। কিন্তু সেনা সংখ্যা কম থাকার মানে যে লিবিয়ার ভেতরে তাদের তৎপরতা কম, তা কিন্তু নয়।

কংগ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন বাহিনী লিবিয়ার মরুভূমিতে লুকিয়ে থাকা ইসলামিক স্টেটের অনুসারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে বিমান হামলা চালায়। তারা সেখানে ড্রোন ব্যবহারও করে থাকে।নাইজার

নাইজারে ৫০০ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু তাদের কথা ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববাসীর অজানা ছিল। ওই সময়ে ইসলামিক স্টেটের অনুগত এক বাহিনী মার্কিন সৈন্যদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে চার মার্কিন সেনা নিহত হন।

সে সময় এ ঘটনা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। নাইজারে নিহত এক সেনার স্ত্রী দাবি করেন, ওই ঘটনার পর তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে এক বিতর্কিত শোকবার্তা পেয়েছিলেন। যাতে লেখা ছিল- সে (সেনা) জানত, সে কীসের মধ্যে ঢুকছে।

ওই ঘটনার দুই মাস পর নাইজেরিয়ান সেনাদের সঙ্গে টহল দেয়ার সময় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এসব ঘটনার বাইরেও ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন বাহিনী আরও ১০টি সামরিক সংঘাতে জড়িত হয়েছে।