বিশ্বের ১৭০টি দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে : জাতিসংঘ

বিশ্বের ১৭০টি দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে কিংবা এর চর্চা নীতিগতভাবে বা কার্যকর করা থেকে বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

বিশ্ব মৃত্যুদণ্ড বিরোধী দিবসে মৃত্যুদণ্ডের চর্চা বন্ধ করার চেষ্টা করায় অনেক দেশের প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে ১৪২ দেশ এখন আর মৃত্যুদণ্ড চর্চা করছে না। খবর বিবিসি বাংলা।

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন সংস্থাটির মহাসচিব তাতে ১৭০টি দেশের তথ্যই উঠে এসেছে, যারা অপরাধের শাস্তি হিসেবে অন্তত দশ বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত রয়েছে।

এ মুহূর্তে জাতিসংঘের সদস্য দেশ ১৯৩টি, যার মানে দাঁড়ায় অন্তত ২৩টি দেশ গত এক দশকে মৃত্যুদণ্ড অন্তত একবার হলেও কার্যকর করেছে।

জাতিসংঘ বলছে সদস্য দেশগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের পাশাপাশি তারা এসব দেশের নাগরিক সমাজের কাছ থেকেও তথ্য নিয়েছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গত পাঁচ বছরে তাদের হিসেবে অন্তত ৩৩টি দেশ একবার হলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।

সংস্থাটি দেশগুলোর সরকারি তথ্য, গণমাধ্যম কিংবা যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের তাদের তথ্যের উৎস বলে উল্লেখ করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেবে ২০১৭ সালে বিশ্বের ৫৩টি দেশে দুই হাজার ৫৯১টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে অ্যামনেস্টির তথ্য

• ১০৬টি দেশের আইন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে সমর্থন করে না।

• সাতটি দেশে যুদ্ধের মতো বিশেষ অবস্থায় ভয়াবহ অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান আছে।

• ২৯টি দেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে কিন্তু এ সত্ত্বেও গত দশ বছরে এসব দেশ এ ধরনের কোনো চর্চা করেনি।

• ৫৬টি দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল আছে। এর মধ্যে কোনো দেশ কার্যকর না করলেও কার্যকর করা হবে না এমন কোনো সরকারি ঘোষণা নেই।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মন্তব্যের পরপর মালয়েশিয়া মৃত্যুদণ্ডের চর্চা থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির পার্লামেন্টের আগামী অধিবেশনেই এটি বিবেচনা করা হতে পারে।

দেশটিতো বারশোর মতো ব্যক্তির ওপর খুন ও মাদক পাচারের মতো কিছু অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের খড়গ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে গিনি ও মঙ্গোলিয়াও গত বছর মৃত্যুদণ্ড প্রথা বিলোপ করেছে। গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টও চলতি বছরের শুরুতে মৃত্যুদণ্ড বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১২ সালে দেশটিতে কারও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল শেষ বারের মতো।

সাব সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বিশটির মতো দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ২৩জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন রাজ্য বিশতম রাজ্য হিসেবে চলতি মাস থেকে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে।

২০১৩-১৭ সময়ে যেসব দেশে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে

আফগানিস্তান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলারুশ, বতসোয়ানা, চাঁদ, চীন, মিসর, গিনি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জাপান, জর্ডান, কুয়েত,মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম ও ইয়েমেন ( লিবিয়া ও সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি)।

আইন থাকা সত্ত্বেও যে ২১টি দেশ কার্যকর থেকে বিরত

অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বাহামা, বার্বাডোজ, বেলিজ, কোমোরোস, কিউবা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডমিনিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গায়ানা, জামাইকা, লেবানন, লেসথো, কাতার, সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।