বিসিএসসহ সকল নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন মুদ্রণ করবে পিএসসি

প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার প্রশ্ন নিজেরাই মুদ্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি)। ৩৯তম স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা নিজেদের মুদ্রণ করা প্রশ্নে আয়োজন করা হবে বলে পিএসসি জানিয়েছে।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা আয়োজনে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ৮ আগস্ট শুরু হবে। ৮ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে।

এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘বিসিএস ও অন্যান্য সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পিএসসি ভবন থেকে প্রণয়ন ও মুদ্রণ করা হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আরও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি নির্ধারিত কক্ষে বসে পিএসসির প্রশ্ন প্রণয়নকারী মডারেটররা একাধিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করবেন। এরপর লটারির মাধ্যমে একটি সেট নির্বাচন করা হবে। সেই প্রশ্ন সেটটি পিএসসির নিজস্ব প্রিন্টারে ছাপা হবে। এরপর সেটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। লটারির মাধ্যমে প্রশ্ন নির্বাচন থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে না যাওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত রুমটি বন্ধ রাখা হবে। পুরো স্থানটি সিসিটিভি দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে।’

জানা গেছে, চলতি বছর ৪ হাজার সরকারি নার্স নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এ বছর শুরুর দিকে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও পরীক্ষার আগেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরদিন লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে পিএসসি। এরপর পিএসসির একজন সদস্যকে আহ্বায়ক করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়। পরবর্তী দুই মাস পরে পুনরায় নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। বর্তমানে নার্স নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘নার্স পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়ায় আমরা লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে পরে আবারও সে পরীক্ষার আয়োজন করেছি। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে নিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন মুদ্রণকারী প্রেস আমাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। এ বিষয়ে আরও সর্তকতা অবলম্বন করতে বর্তমানে পিএসসি থেকেই প্রশ্ন মুদ্রণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

পিএসসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি মাসে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য পিএসসি বিসিএসসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫টি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। এসব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পিএসসির নিজস্ব মডারেটররা তৈরি করলেও তা বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ে (বিজি প্রেস) ছাপা হয়। বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁস হওয়ার এক ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পিএসসি থেকে নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রশ্ন মুদ্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নপত্র মুদ্রণ করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনটি ডিজিটাল প্রিন্টার রয়েছে। নতুন করে আরও তিনটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ডিজিটাল প্রিন্টার কেনা হয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি পুরনো প্রিন্টার রয়েছে। সেগুলো দিয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপার কাজ করা হবে।

তথ্য মতে, ৩৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিশেষ বিসিএসে মোট ৩৯ হাজার ৯৫৪ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। ৩৯তম বিসিএসে ৪ হাজার ৫৪২ জন সহকারী সার্জন আর ২৫০ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন নেয়া হবে। সবমিলে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক নেয়া হবে এই বিসিএসে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে এক কথায় লিখিত পরীক্ষা হবে। এতে ২০০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এছাড়া ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হবে।

মেডিকেল সায়েন্স বা ডেন্টাল সায়েন্স বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এছাড়া বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০ নম্বর করে এবং মানসিক দক্ষতা ও গাণিতিক যুক্তিতে ১০ নম্বর করে মোট ২০০ নম্বরের দুই ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা হবে। প্রতি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর দেয়া হবে। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা হবে শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর পিএসসি নির্ধারণ করবে। মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর ধরা হয়েছে ৫০। লিখিত পরীক্ষা শুধু ঢাকায় হবে।

অন্যদিকে, ৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা চলতি বছরের ৮ থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে ১৬ হাজার ২৮৬ জন উত্তীর্ণ হন। তারা এখন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা হওয়ার প্রায় দুই মাসের মধ্যে এ ফল প্রকাশ করা হয়। বিসিএসের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩৮তম বিসিএসে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এতে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এর আগে ৩৭তম বিসিএসে অংশ নেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন পরীক্ষার্থী।

জানা গেছে, ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে ২ হাজার ২৪ জন ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তার মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ৩০০, পুলিশ ক্যাডারের ১০০টি পদসহ ৩৮তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে মোট ৫২০টি, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯টি এবং শিক্ষা ক্যাডারে ৯৫৫টি পদ রয়েছে।