বিসিএস কর্মকর্তার চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর ৫০ লাখ

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে পিত্তথলিক পাথর অপারেশন করতে গিয়ে জীবন সংশয়ে পড়া বিসিএস ক্যাডারের প্রশাসনের কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের চিকিৎসায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম রোদ্দুরকে বুধবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের এলিজাবেথ মাউন্টেন্ট হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।

রোদ্দুরের জীবন সংশয়ে পড়ার জন্য দায়ী স্কয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।

বর্তমানে রোদ্দুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোদ্দুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ঢাকার ধানমন্ডি রেভিনিউ সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সম্প্রতি তাকে সরকারি কর্ম কমিশনে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি সেখানেও সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ১৭ জানুয়ারি পিত্তথলির পাথর অপসারণে স্কয়ার হাসপাতালে গ্যাস্ট্রো অ্যান্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম এস আরেফিনের অধীনে ভর্তি হন রোদ্দুর।

কিন্তু চিকিৎসকরা পাথর অপসারণ করতে গিয়ে চিকিৎসকরা ভুলক্রমে রোদ্দুরের ডিওরেনাম (অন্ত্র) ছিদ্র করে দেন। কিন্তু তারা সেটি গোপন রাখেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে রবিবার তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেদিনই জানা যায়, তার অন্ত্র ছিদ্র হয়ে গেছে। তার অবস্থা বেগতিক দেখে আইসিইউতে নেয়া হয়।

গত সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডাক্তারদের বোর্ডসভা শেষে জানানো হয়, রোদ্দুরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে যা পায়খানার রাস্তা ও নাক-মুখ দিয়ে বের হচ্ছে। ধমনীতেও তার প্রভাব পড়ছে।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানান, অন্ত্রে তৈরি হওয়া ছিদ্রটি বন্ধ করতে হলে ওপেন সার্জারি করতে হবে যেটি রোগীর বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সিঙ্গাপুরে এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা দিয়ে লেজারের মাধ্যমে অন্ত্রের ছিত্র বন্ধ করা সম্ভব। তাই সেখানে যাওয়া ভালো।

কিন্তু সিঙ্গাপুরে টিকিৎসা ব্যয়বহুল। রোদ্দুরের পরিবারের পক্ষে সেটা কঠিন। এই অবস্থায় তার ব্যাচমেটরা টাকা যোগাড় করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও এই বার্তা পৌঁছে দেন তারা। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদের অর্থের দুশ্চিন্তা দূর করেন।

রোদ্দুরের ব্যাচমেট তৌহিদ এলাহী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রোদ্দুরের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার রাত ১২ টার সময়ে রোদ্দুরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের এলিজাবেথ মাউন্টেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।’

রোদ্দুরের এই পরিণতির জন্য স্কয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে তৌহিদ এলাহী বলেন, ‘আমরা এখন রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। আগে তাঁর চিকিৎসার হোক পরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিম্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘আজ বুধবার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে রোদ্দুরকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। তবে তাঁর চিকিৎসা ব্যয় কীভাবে জোগাড় হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই।’

রোদ্দুরের জীবন সংশয়ে থাকলেও বিষয়টি নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

রোদ্দুরের এই পরিণতির বিষয়ে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে স্কয়ার হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ক্লেমেন্ট বলেন, ‘এ রকম কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।’

হাসপাতালে গ্যাস্ট্রো অ্যান্টোলজি বিভাগে যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন সেই অধ্যাপক এম এস আরেফিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্যার এখন অনেক ব্যস্ত, কথা বলতে পারবেন না।’