বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় জান্নাতুল নাঈম

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জান্নাতুল নাঈমের বিয়ে হয়। প্রায় আড়াই মাস সংসার করার পর তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। অথচ এসব তথ্য গোপন রেখেই জান্নাতুল নাঈম ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রথম শর্ত হলো, প্রতিযোগীকে অবিবাহিত হতে হবে। কিন্তু জান্নাতুল নাঈম তাঁর বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ফলে তাঁর মুকুট নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জান্নাতুল নাঈমের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৫ নম্বর বরমা ইউনিয়নের সেরন্দি গ্রামের রাউলিবাগ এলাকায়। তাঁর বাবা তাহের মিয়া ও মা রেজিয়া বেগম। চন্দনাইশ পৌরসভার কাজি অফিস থেকে পাওয়া কাবিননামা অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২১ মার্চ চন্দনাইশ পৌর এলাকার বাসিন্দা ও কাপড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিনের সঙ্গে জান্নাতুলের বিয়ে হয়। বিয়ের দেনমোহর ছিল ৮ লাখ টাকা। বিয়ের উকিল হন মেয়ের বাবা তাহের মিয়া। বিয়েতে কাজি ছিলেন আবু তালেব। একই বছরের ১১ জুন তালাকনামায় সই করেন জান্নাতুল।

বিয়ের আসরে বর মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিনের সঙ্গে জান্নাতুল নাঈম।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, তাহের মিয়া ও রেজিয়া বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট জান্নাতুল নাঈম। গত শুক্রবার রাতে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় তিনি বিজয়ী হন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এলাকার লোকজন জানান, জান্নাতুল দুরন্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। চন্দনাইশের বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ফলাফল প্রকাশের আগে ওই বছর ২১ মার্চ বেশ ধুমধাম করে একই উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। চন্দনাইশ পৌর এলাকায় অবস্থিত মুনজুরের কাপড়ের দোকানের নাম ভিআইপি ক্লথ স্টোর অ্যান্ড টেইলার্স।

বরমা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (ইউপি মেম্বার) নওশা মিয়া বলেন, ‘জান্নাতুলের বিয়ে হয়েছিল। দুই-আড়াই মাস এই বিয়ে টেকে। জান্নাতুলের বাবা একসময় গাছের ব্যবসা করতেন। এখন টুকটাক কৃষিকাজ করেন। জান্নাতুল নাঈম সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার খবর আমি টিভি চ্যানেলে দেখতে পাই। এরপর গ্রামের লোকজনের মুখে মুখে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। জান্নাতুল আমাদের গৌরবান্বিত করেছে।’

বিয়ের আসরে বর মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিন, জান্নাতুল নাঈম ও তাঁর মা

জান্নাতুল নাঈম গ্রামের বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ এইচ এম সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘জান্নাতুল আমাদের ছাত্রী ছিল। ছাত্রী থাকাকালীন তার বিয়ের অনেক প্রস্তাব আসত।’ সৈয়দ হোসেন আরও বলেন, ‘জান্নাতুল মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে। আমি ফেসবুকে এই সংবাদ পাই।’

গত রোববার জান্নাতুলের গ্রামের বাড়িতে তাঁর মা রেজিয়া বেগমের সঙ্গে সরাসরি কথা হলে তিনি মেয়ের (জান্নাতুল) বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়ের বাগদান হয়েছিল। তবে বয়স কম ছিল এবং পাত্র পছন্দ না হওয়ায় সে বিয়ে করেনি। পরে কক্সবাজারের মহেশখালী গিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে। এরপর ঢাকায় চলে যায়। কিন্তু বিয়ে না করায় তার বাবা খুব রাগ করেছে।’

পরে জান্নাতুল নাঈমের বিয়ের কাবিননামা প্রসঙ্গে মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আসলে কীভাবে এই বিয়ে হলো, আমরাও বুঝতে পারছি না। আমার মেয়ে তখন ছোট ছিল। বিয়ে কী, সে সেটা বুঝতে পারেনি। তাই সংসার করেনি। তবে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে জান্নাতুল আমার ছেলে ফোরকান উদ্দিনের কাছে মহেষখালীতে চলে যায়। সেখানে একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে আর পড়াশোনা করেনি। এখন ঢাকায় থাকে।’

এদিকে জান্নাতুলের সাবেক স্বামী মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দীন বলেন, ‘আমার সঙ্গে জান্নাতুল নাঈমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই মাস আমার বাড়িতে ছিল সে। সে বাপের বাড়িতে নাইওর যায়। নাইওর যাওয়ার দুদিন পর এক রাতে তার বাবা আমাকে ফোনকল দিয়ে বলেন, জান্নাতুলকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুঁজে বের করতে বলেন। জান্নাতুলকে খুঁজে বের করতে আমি রাজি হইনি।’

মুনজুর উদ্দীন আরও বলেন, ‘পরদিন সকালে জান্নাতুল আমাকে ফোন করে বলে, আমাকে ডিভোর্স দাও, নইলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দেব। ডিভোর্সের জন্য আমি এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেছি। পরে জান্নাতুলের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে দুই পক্ষের সমঝোতায় নগরের লালদীঘি পারের একটি হোটেলে আমরা যাই। সেখানে ২০১৩ সালের ১১ জুন কাজির উপস্থিতিতে জান্নাতুল এবং আমি সই করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাই। আসলে জান্নাতুল আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার মতো অন্য ছেলে যেন তাঁর প্রতারণার শিকার না হয়।’

এই বিয়ের ব্যাপারে জান্নাতুল নাঈমের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। শুরুতে তিনি কথা বলেন। এরপর বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি ফোনকল কেটে দেন। এরপর তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।