বুধবার যাত্রা শুরু হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন হাসপাতালের

যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণে এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান।

আগামী বুধবার বেলা ১১টায় চানখাঁরপুল এলাকায় অবস্থিত এই ইনস্টিটিউটটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটির বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হয় প্রতিষ্ঠানটির চিফ কো-অর্ডিনেটর ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে।

তিনি জানান, এরই মধ্যে ইনস্টিটিউটটির ভৌত কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আসবে ধীরে ধীরে। তবে আগামী বুধবার প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে।

সামন্ত লালের ভাষ্যে, এখানে দগ্ধ রোগীরা যেমন উন্নত সেবা পাবেন, তেমনি চিকিৎসক-নার্সরাও তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

এত বড় ইনস্টিটিউট পরিচালনা। পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের বার্ন ইউনিটে যে পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছে, তাদের নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করবে। সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়েই দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি চালানোর চেষ্টা করা হবে। প্রয়োজন অনুসারে পরে আরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হবে, সেটা অবশ্য সময়ের ব্যাপার।

ডা. সামন্ত লাল বলেন, উদ্বোধন শেষে এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। সব ধরনের দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা ছাড়াও এখানে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এটি দেশে-বিদেশে আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসার একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হবে।

চাকরি জীবনের শুরুর দিকের স্মৃতি স্মরণ করে এই চিকিৎসক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচটি শয্যা দিয়ে আমি চাকরি জীবন শুরু করেছিলাম। সময়ের পরিক্রমায় সেই বার্ন ইউনিট এখন একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে।

এই ইনস্টিটিউটে আরো অধিক পোড়া রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ হবে এবং এখানকার প্লাস্টিক সার্জনরা দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন বলেও জানান ইনস্টিটিউটের চিফ কো-অর্ডিনেটর।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, এখানে চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে। একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থাকবে। ইতোমধ্যে গ্রন্থাগারের জন্য ৬ কোটি টাকার বই কেনা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করেছে। এই ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৫২২ কোটি টাকা।

কী থাকছে বার্ন ইনস্টিটিউটে

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, বার্ন ইউনিট, প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ও একাডেমিক উইং— এই তিনটি ব্লক থাকছে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে অবস্থিত ১২তলা এই ইনস্টিটিউটে। এতে পোড়া রোগীদের জন্য থাকছে ৫০০টি শয্যা, ১০০টি কেবিন। ৫৪ ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং অত্যানুধিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জরুরিভাবে রোগী নিয়ে আসার জন্য ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড সুবিধা থাকছে। সোলার প্যানেল ও বৃষ্টির পানি সঞ্চয়েরও ব্যবস্থা থাকবে।

পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮০টি গাড়ি রাখা যাবে। ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে ইনস্টিটিউট ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে।

বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার কাজ শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি জার্মানি থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও কানাডা থেকে কিছু সরঞ্জাম আনা হবে। ইতোমধ্যে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার সরঞ্জাম আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয় শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের।

২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রথম ধাপে নির্মাণ কাজ শুরু করে। নির্মাণকাজ এ বছর ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। এর প্রকল্প ধরা হয়েছে ৫২২ কোটি টাকা। এ ছাড়া জনবল নিয়োগের জন্য প্রায় ২ হাজার ২০০ পদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।