বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই গোয়াল ঘরে!

বাগেরহাট: মায়ের এক ধার দুধের দাম/ কাটিয়া গায়ের চাম/ পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/ এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা গো। শিল্পী ফকির আলমগীরে কণ্ঠে গাওয়া এমন মর্মর্ষ্পশী গান দেশ-বিদেশের বহু মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিলেও। অনেক সময় আপন সন্তানদের ভেতরে নাড়া দেয় না। অনেক সময় দেখা যায় মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে অর্থের নেশায় অন্ধ হয়ে বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজখবর নেয়ার সময়ই হয় না কারো কারোও। অনেক সন্তান আবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কেউবা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। আবার অনেক সময় দেখা বৃদ্ধ বাবা-মার ঠিকানা হয়েছে বাড়ির গবাদি পশুর ঘরে (গোয়াল ঘরে)।

এমনই হৃদয় বিদারক একটি ঘটনা ঘটেছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়। বৃদ্ধ মাকে কুলাঙ্গার ছেলে গোয়ালঘরে রেখেছে। মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) ওই অবহেলিত বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘর থেকে উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। উদ্ধার হওয়া বৃদ্ধা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মৃত হিমু তালুকদারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৭০)।

এদিকে এ ঘটনায় সারা উপজেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে শরণখোলা থানা পুলিশ ওই বৃদ্ধার বড় ছেলে হারুন তালুকদারকে আটক করে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ফাতেমা বেগমের স্বামী হিমু তালুকদার মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে হারুন ও বাবুল ভরনপোষণ দিত। এক পর্যায় বাবুল তার মায়ের নিকট থেকে কৌশলে সব জমি লিখে নেয়। এতে হারুন অভিমান করে তার মায়ের খোঁজ খবর নেয়া বন্ধ করে দেয়।

সম্প্রতি ফাতেমা বেগম গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে ছোট ছেলে বাবুল তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করায় ওই বৃদ্ধা পরিবারের কাছে এক প্রকার বোঝা হয়ে পড়ে। এছাড়া বাবুলের ঘরের সুখ-শান্তি ফিরিয়ে আনতে তার মাকে পার্শ্ববর্তী গোয়াল ঘরে ৪/৫ মাস ধরে রেখে দেয়। এ অমানবিক বিষয়টি স্থানীদের নজরে আসে এবং মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) উপজেলা প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে বাবুলের বসত ঘরে ফিরিয়ে দেয়।

বাবুলের পরিবার সূত্র জানায়, তার মা যে ঘরে বসবাস করত ওই ঘরটি নোংরা হয়ে যাওয়ায় তা পরিস্কার করার উদ্দেশ্যে সামান্য সময়ের জন্য ওই গোয়াল ঘরে রাখা হয়।

শরণখোলা থানার ওসি মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমকে উদ্ধার বাবুলের বসত ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে। বুধবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে দুই ছেলেসহ স্থানীয়দের বৈঠক করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, পিতা-মাতার প্রতি এ ধরণের অমানবিক আচরণ কোনো সন্তান না করে সে জন্য প্রশাসনের সমন্বয় বৈঠক করে ওই বৃদ্ধার ছেলের কাছ থেকে মুসলেকা নেয়া হবে।