বৃষ্টিপাতে এডিস মশার প্রকোপ বাড়বে নাকি কমবে

কয়েক দিনের টানা গরমের পর কোরবানির ঈদ থেকে ঢাকাসহ দেশজুড়ে চলছে হালকা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত। ফলে অনেক জায়গাতেই স্বচ্ছ পানি জমতে শুরু করেছে।

এ কারণে মশার উপদ্রব সেইসঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদি তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বাড়তে থাকে তাহলে মশার বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেও জানা গেছে।

বৃষ্টিপাতে এডিসের উপদ্রব
আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সামনের আরও দুই দিন রাজধানীসহ সারাদেশে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

এডিস মশা যেহেতু পরিষ্কার পানিতে বেশি জন্মায় তাই বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে জমা স্বচ্ছ পানিতে এডিসের উপদ্রব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ চন্দ্রিমা ইমতিয়া।

কেননা বৃষ্টির পানি জমা স্থানগুলো এডিস মশার লার্ভার বিস্তার ও প্রজননের সবচেয়ে অনুকূল স্থান।

যেখানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় জন্মায়।

এডিস মশার বিস্তার করবে কি করবেনা তা নির্ভর করছে কী হারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তার ওপর- এমনটাই মনে করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।

তার মতে, “মুষলধারে বৃষ্টিতে লার্ভা ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে যাবে। মশা কমবে সেইসঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপও কমবে। অতিবৃষ্টির কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি হলে মশা বাড়বে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে।”

গত সোমবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত পর্যালোচনা সভায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

কীটতত্ত্ববিদ মিস ইমতিয়া, তার এই যুক্তির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারেননি।

তার মতে, “বৃষ্টি থেমে থেমে হচ্ছে নাকি মুষলধারে হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা বৃষ্টিতে মশার লার্ভা ধুয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং এতে মশার ওষুধ ধুয়ে যেতে পারে। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।”

তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা
এই দুই বিশেষজ্ঞই মনে করেন, মশার উপদ্রব বাড়বে নাকি কমবে সেটা পুরোটাই নির্ভর করে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপরে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৮.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯২% রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিন যা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এমন গরম আবহাওয়ার বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও মশা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বায়ুমণ্ডলের ৭০% থেকে ১০০% আর্দ্রতা হল এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযোগী আবহাওয়া।

এ কারণে চলতি বছর বর্ষা আসার আগেই অর্থাৎ মার্চ মাস থেকে বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হল ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম।

সে হিসেবে আগস্ট মাসের পর থেকে এডিস মশার উপদ্রব কমার কথা, কেননা এই সময়ে তাপমাত্রাও কমতে থাকে। এক পর্যায়ে সেপ্টেম্বরের শেষে মশা হাইবারনেশনে চলে যায়।

সেপ্টেম্বরের পর থেকে তাপমাত্রা নামার কথা থাকলেও এখন আবহাওয়া আর আগের মতো নেই। তাপমাত্রা খুব ধীরে ধীরে নামছে।

তাই যদি এই বৃষ্টিতেও তাপমাত্রা না কমে এবং বৃষ্টি থামার পরই আমার গরম পড়ে যায়, তাহলে মশাও বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন মিস ইমতিয়া।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৭৮৬৯ জন।

এরমধ্যে, গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১৮৮০ জন।

চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েক সপ্তাহের চাইতে এবার কিছুটা কমলেও সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের কারণে তা আবার বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চন্দ্রিমা ইমতিয়া বিবিসি বাংলাকে জানান, এডিস মশার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক আবহাওয়ার কারণে এডিস মশার প্রকোপ আবারও বেড়ে যেতে পারে।

জরুরি ভিত্তিতে মশা দমনে আগাম ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।