বেগমগঞ্জে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার আসামী হকার জাকির গ্রেপ্তার

এইচ.এম আয়াত উল্যা, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ দুটি অপহরণ ও ধর্ষন মামলার আসামী হকার জাকিরকে ১৮ আগস্ট দুপুর ১.৩০মিনিটে গ্রেপ্তার করছে ডিবি পুলিশ।

মামলা সুত্রে জানা যায়, সেনবাগ উপজেলা অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১৩) অস্ত্রের মাধ্যমে জোরপূর্বক অপহরণের পর প্রতারণার মাধ্যমে ভূয়া বিয়ে সাজিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে হকার জাকির হোসেন (৪০) নামের এক প্রতারক বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে। একই সাথে ওই যুবক ভিকটিমের বাবা-মার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছে।

এ ঘটনায় ভিকটিম ফাহিমা আক্তার প্রতারক জাকির হোসেন ও তার সহযোগী সহ ৮ জনকে আসামী করে বেগমগঞ্জ থানায় শিশু ও নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ধারায় অপহরণ, ধর্ষণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ একটি মামলা দায়ের করে মামলা ০৫/২০১৯। পরে বেগমগঞ্জ থানায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামী জাকির হোসেন (৪০)কে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। শেষে আসামী কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন।

কারাগারে প্রেরণকৃত আসামী হলো, জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের (মৃধা বাড়ির) আবুল খায়েরের ছেলে হকার জাকির হোসেন(৪০), ভিকটিম ফাহিমা আক্তার মামলার এজাহারে অভিযোগ করে জানান, ২০১৫ সালে আমি কাবিলপুর হাই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলাম। তখন আমার প্রকৃত বয়স ছিলো (১৩)। আমি স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে পাশ্ববর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার বখাটে যুবক হকার জাকির হোসেন প্রায় সময় আমাকে উক্ত্যক্ত করতো। আমি এর প্রতিবাদ করলে উল্টো জাকির হুমকি দিয়ে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হলে জাকির আমাকে হুমকি দেয়, বিয়েতে রাজি না হলে সে আমাকে স্কুলে যাওয়ার পথে জোরপূর্বক অপহরণ করে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করবে। পরে আমি ভয়ে বিষয়টি আমার বাবা মাকে জানাই। এতে জাকির আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে প্রতিদিনের ন্যায় আমি স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছলে হকার জাকির, তার ভগ্নিপতি জসিম, ছোট ভাই বাবু ও বোন ধনি বেগম কাবিলপুর স্কুলের পশ্চিম পাশির পাকা রাস্তার উপর থেকে একটি সিএনজিঅটোরিকসা যোগে জোরপূর্বক আমাকে অপহরণ করে বেগমগঞ্জ কাজীরহাট বাজার কাজী অফিসে নিয়ে যায়। পরে তারা আমার মোবাইল জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে রুমে বসিয়ে রাখে। আমাকে কেন তুলে আনা হয়েছে জানতে চাইলে জাকির হুমকি দিয়ে বলে আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হওযায় সে আমাকে বিয়ে করার জন্য এনেছে। এরপর সে আমার বাবা-মা’র মোবাইল নাম্বার চায়। আমি নাম্বার দিতে অস্বীকার করলে জাকির ও তার লোকজন আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি প্রাণের ভয়ে জাকিরকে আমার বাবা-মা’র মোবাইল নাম্বার দিলে তারা ফোন করে আমার বাবা-মাকে কাজী অফিসে নিয়ে আসে এবং জাকির পরবর্তীতে তার বাবা আবুল খায়ের ও মা মনোয়ারাকে ও ফোন করে কাজী অফিসে নিয়ে আসে। এরপর সবাই একত্রিত হয়ে জোর কের মোবাইলে আমার ছবি তোলে এবং প্রতারণার আমার মা-বাবাকে জানায়, আপনার মেয়ের সাথে জাকিরের বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু কোন বিবাহ পড়ানো হয় নাই। পরে আমার ও আমার বাবা- মায়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক কয়েকটি কাগজে ও রেজিষ্ট্রারে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। তারা আমার বাবা-মাকে অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে বিষয়ে কোনো মামলা করলে বা কাউকে জানালে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে প্রাণে হত্যা করবে। তারা একপর্যায়ে আমার বাবা-মাকে হুমকি দিয়ে বলে জাকির ও ফাহিমা এখন থেকে বৈধ ম্বামী-স্ত্রী। তারা এখন থেকে একসাথে থাকবে। আমার বাবা-মা মান-সম্মানের ও জানের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্রের ভয়ে চুপ থাকলে জাকিরের ভগ্নিপতি জসিম ও বোন ধনি বেগম আমাকে ও আমার মা-বাবাকে জোর করে দ্বীনেশগঞ্জ জসিমের ভাড়াটিয়া বাসা বাড়িতে নিয়ে। যায়। সেখানে প্রতারক জাকির প্রতারণামূলক বিয়ের কথা বলে দুই দিন ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। দুই দিন পর তারা আমাকে ও আমার বাবা-মাকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরপর জাকির ও তার লোকজন আমাদের বাড়ীতে আত্মীয়তার পরিচয়ে আসা-যাওয়া করতে থাকে। আমার বাবা-মা বিষয়টি বুঝতে না পেরে সরল মনে বিষয়টি মেনে নেয়। কিন্তু এরপর প্রতারক জাকির ব্যবসার কথা বলে আমার বাবা-মা’র কাছ থেকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং এবং আমার মা-বাবা আমাকে ৪ ভরি স্বর্ণালংকার বানিয়ে দেয় যা কৌশলে জাকির বন্ধক রাখবে বলে বিক্রি করে দেয়। এভাবে আমি তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে জাকিরের কাছে আমাদের বিবাহের কাবিননামা চাইলে, সে আজ নয় কাল দিবো বলে টালবাহনা করতে থাকে। পরে আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে বেগমগঞ্জে কাজীরহাট বাজার কাজী নজরুল ইসলাম ও নুরুল আলমের কাছে কাবিননামা চাইলে তারা বলে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে আপনাদের কাছ থেকে যে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে তাহা কোন কাবিনের স্বাক্ষর নয়। তখন আমরা বুঝতে পারি, জাকির তার আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় প্রতারণামূলক বিয়ে সাজিয়ে কাজী অফিসে নিয়ে ৮ লাখ টাকা দেনমোহর উল্লেখ করে জাল কাবিননামা ও কাবিন রেজিষ্টারে স্বাক্ষর নিয়ে কাবিননামা না করে ওই দিন থেকে মিথ্যা বিয়ে নামে আমাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ধর্ষণ করে। পরে আমার বাবা-মা আমি জাকির ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আমাকে অপহরন করে বিয়ের নামে ধর্ষন, আমার বাবা-মা’র কাছ থেকে হইতে ব্যবসার কথা বলে নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও আমার ৪ ভরি স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করার অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে বিয়ের কাবিননামা উদ্ধারের জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। এর জের ধরে জাকির ও তার লোকজন আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে আমি নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারক জাকির হোসেন ও তার সহযোগী সহ ৮ জনকে আসামী করে বেগমগঞ্জ থানায় শিশু ও নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ধারায় অপহরণ, ধর্ষণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ একটি মামলা দায়ের করি। আমি প্রতারক জাকির ও সহযোগী আত্মীয়-স্বজনের বিচার দাবি করছি, যেনো আর কোনো স্কুল ছাত্রী এরকম দুষ্ট প্রকৃতরি প্রতারকদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে জোরপূর্বক মিথ্যা বিয়ের নামে ধর্ষণের শিকার না হয়। সেনবাগ উপজেলার মইজদীপুর কাজলের অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুল পড়–য়া কন্যা ফাহিমা আক্তার (১৩)কে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের নামে গত ৩ বছর যাবত অবৈধভাবে ধর্ষণ করে আসছে প্রতারক জাকির হোসেন (৪২) ফাহিমা আক্তারের পিতামাতা বিয়ের কাবিনের জন্য বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়েও ৩ বছরেও বিয়ের কাবিন করাতে পারেনি। নিকাহ রেজিষ্টার (কাজি) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফহিমার বাবা নোয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ইং তারিখে অভিযোগ করে বলেন প্রতারক জাকির তার ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিন সহ মিলে অপহরনের পর বিয়ে এবং কাবিনের বিষয়ে সমত্যতা যাচাই বাচাই করার জন্য অনুরোধ করেন।

পুলিশ সুপার নোয়াখালী বেগমগঞ্জ মডেল থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিন করার জন্য নির্দেশ দিলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফিরোজ হোসেন মোল্লা বেগমগঞ্জ মডেল থানার এস আই সুজন বিকাশ চাকমাকে তদন্ত ভার দেন, সুজন বিকাশ চাকমা অভিযোগের আলোকে ঘটনাস্থল কাজী অফিস ও দ্বীনেশগঞ্জ জসিমের ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে তদন্ত করে তদন্তে ফাহিমা আক্তারের বিয়ে এবং কাবিনের কোন সত্যতা পায় নায়। পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে।যার স্মারক নং ১০২৫১, তাং- ২১/১২/২০১৮ইং প্রতিবেদনের আলোকে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারী ফাহিমা আক্তার নিজে বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি এজহার দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ০৫/১৯ জি.আর২০/১৯ দ্বারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধনীয় ২০০৩ এর ৭/৯(১)/৩০তৎসহ ৩২৩/৩০৭/৪২০/৫০৬ পেনাল কোঢ উক্ত মামলায় জেল খাটে হকার জাকির হোসেন, তার ভাই মমিন উদ্দিন বাবু ও বিবাহ পড়ানোকারী নিকাহ রেজিষ্টার (কাজি) নজরুল ইসলাম, জাকির হোসেন জামিনে এসে গত ২৩ এপ্রিল ২০১৯ জাকির হোসেন সহ অজ্ঞাত নামা ২/৩ জন ফাহিমা আক্তারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ায় বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি করা হয় যার জিডি নং ১৪৩৩ জিডির এক দিন পরেই ২৫ এপ্রিল জাকির হোসেন ও আরাফত হোসেন সানি সহ তার ১ বন্ধু মিলে প্রমিকে পুনরায় অপহর করে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার উত্তরে মিরওয়ারিশপুর ইতালি নুরুল ইসলামের বিল্ডিয় এর ৩য় তালায় পুনরায় ধর্ষন করে।

এ ঘটনায় বেগমগঞ্জ মডেল থানায় জাকির সহ তার এক বন্ধুর বিরোদ্ধে অপহর ও ধর্ষনের বিরোদ্ধে আরও ১টি মামলা হয়, যাহার মামলা নং ৬৭/১৯ জি আর নং ৮৯৮/১৯ ২টি অপহর ও ধর্র্ষন মামলার আসামী জাকির জসিমের দ্বীনেশগঞ্জ তার ভাড়া বাসায় নিয়ে অটক করে এবং ফাহিমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে তার মা বাবাকে জানয়। কিন্তু পুলিশের তদেন্তে বিয়ে এবং কাবিনের কোন সত্যতা পাওয়া যায় নাই।