বেনাপোল বন্দরে ৫ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা

বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে কাস্টমস ওয়েভিং স্কেলে বিজিবি স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়ার প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। বন্ধ রয়েছে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি।

আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় দুই দেশের বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে ৫ শতাধিক পণ্যবোঝাই ট্রাক। সোমবার বিকেলে বেনাপোল চেকপোস্ট ও রফতানি টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, দুই দেশের বন্দর এলাকায় শত শত পণ্যবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।

এর আগে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপেল স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পণ্য মাপার ওয়েভিং স্কেলে বিজিবির দায়িত্ব পালনকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুর থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।

বৈধ রুটে আমদানিকৃত পণ্য চালানে কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রমের বাইরে বিজিবির কাস্টমস আইনবহির্ভূত হস্তক্ষেপের ফলে বেনাপোলের সামগ্রিক বাণিজ্য ও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিলন জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআরও এবং বিভিন্ন সময়ে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্দেশনা বিজিবি কর্তৃপক্ষ উপেক্ষা করে বন্দর এবং কাস্টমস ওয়েভিং স্কেলে বসে আমদানি পণ্য চালানের ওজন পরিমাপ শুরু করে।

তিনি বলেন, শনিবার থেকে বিজিবির কয়েকজন সদস্য বন্দরের ওয়েভিং স্কেল এবং কাস্টমস ওয়েভিং স্কেলে বসে আমদানিকৃত পণ্য চালানের মালামাল ওজন করছেন। বিজিবি বন্দর এলাকায় আমদানি-রফতানি-সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর আমদানি-রফতানি ব্যাহত হলে রাজস্ব আদায়ে ধস নামবে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে। এরই প্রতিবাদে রোববার দুপুর থেকে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখে। সোমবার সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ, আমদানি পণ্য খালাসের বিল অব এট্রি দাখিল না করা ও বন্দর থেকে পণ্য খালাস না করায় বেনাপোল বন্দর স্থবির হয়ে পড়ে।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় কার্গো শাখা অফিস, বন্দর ও কাস্টমস ওয়েভিং স্কেলের সামনে বিজিবি চেয়ার বসিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে নজরদারি শুরু করে। বন্দর এলাকায় তাদের টহল দিতেও দেখা যায়। এই অবস্থায় ধর্মঘট ডাকে ব্যবসায়ীরা।

পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, হঠাৎ আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন তারা। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় পেট্রাপোল বন্দরে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। পচনশীল পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সন্তোষজনক সমাধানের মাধ্যমে দ্রুত বাণিজ্য সচল হবে এমনটি আশা করছেন তিনি।

যশোর ৪৯-বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুল হক জানান, জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির ৬০তম সভার কার্যবিবরণীর গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে দেশের সব বন্দরে পণ্য পরিমাপের স্কেলে কাস্টমস সদ্যস্যদের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের যৌথভাবে কাজের সিদ্ধান্ত হয়। ওই আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনাররা ছিলেন। তারা সবাই সম্মতি দিয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি সদস্যরা বন্দরে কাজ করছেন।

এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, কাস্টমসের কাজ কাস্টমস করবে। সেক্ষেত্রে বিজিবি বন্দরে আমদানি পণ্যের ওজনের ব্যাপারে নজরদারি করতে পারে না। আমদানি-রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে বন্দর এলাকায় বিজিবির নজরদারির এখতিয়ার নেই। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানিসহ খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। সিদ্ধান্ত এলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে বিষয়টি সুরাহা করা হবে।