বেরোবিতে প্রগতিশীল ও নীল দলের পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ-অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ

এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষকদের উপাচার্যপন্থী পরিচিত শক্তিশালী প্রগতিশীল ও অপর গ্রুপ নীল দল।

বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারার প্রতিবাদে আজ বেলা ১১ টায় মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালনকারী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর শিক্ষকবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে যারা পাঁয়তারা করছে তাদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকবৃন্দ।

অপরদিকে শিক্ষকদের আরেক গ্রæপ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর চেতনা, আদর্শ ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত শিক্ষকবৃন্দের সংগঠন- ‘নীল ল’ গণমাধ্যমে পাঠানো আজ এক সংবা বিজ্ঞপ্তিতে তাঁদের ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করার অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে বেরোবি পরিবারে প্রতিটি সদস্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। বিভাজন সৃষ্টি করতে পারলে প্রশাসন তার অপকৌশল প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে বলে নীল দলে দৃঢ় বিশ^াস। দলটি এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধের আহŸান জানায়। এর আগে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করে এ দলটি।

প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য সচিব মোহাম্মদ রফিউল আজম খান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহবায়ক এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আবু কালাম মোঃ ফরিদ উল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এইচএম তারিকুল ইসলাম, প্রভাষক অবিনাশ চন্দ্র সরকার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ রশীদুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাইদুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান প্রমুখ।

প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহবায়ক ড. ফরিদ উল ইসলাম বলেন, এই ক্যাম্পাসকে যারাই অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করবে তাদের এখন থেকে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, গত আট বছর ধরে যারা বিভিন্ন অজুহাতে ক্যাম্পাসের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করেছে তারাই নতুন করে আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বর্তমান সরকারকে বিপাকে ফেলতে চায়। এখান থেকে বুঝতে হবে বর্তমান আওয়ামীলীগের নের্তৃত্বাধীন সরকারের বিপক্ষে কারা কাজ করছে। শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত উপাচার্যের প্রশাসনের আমলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা স্থবির করে রেখেছিল তারাই বর্তমান প্রশাসনকে নানাভাবে ডিস্টার্ব করার চেষ্টা করছে। গত চার বছরে যেখানে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের কাজ হয়নি, বরং বর্তমান প্রশাসন ায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় গতিশীল হয়েছে সেই গতিকে থামিয়ে দিয়ে তারা নিজেরে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তবে এই ঘটনায় হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত। তিনি বলেন, মিথ্যাচার কওে বেশিদিন চলা যায় না। শিক্ষকদের লের ব্যানার ব্যবহার করে সেখানে শিক্ষার্থীরে নিয়ে এসে আন্দোলন করাও ওই নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর পর যদি এরকম ঘটনা ঘটানো হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য একযোগে তাদের প্রতিহত করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এর প্রভোস্ট (চলতি ায়িত্ব) এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাকিতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান বলেন, নির্মাণের পর চার বছর ফেলে রাখা ক্যাফেটেরিয়া বর্তমান প্রশাসন ায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় শিক্ষার্থীরে জন্য খুলে দিয়েছে, বছরের পর বছর ফেলে রাখা শিক্ষক ডরমিটরি খুলে দিয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যাধুনিক ুটি বাস এনেছে, হলগুলোর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরার করতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট কমানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেসব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই একটি বিশেষ মহল নানা অপতৎপরতা শুরু করেছে। নানা ছুতোয় তারা শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়ে ক্যাম্পাসে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাত্র দুই তিন জন মানুষ এসব কাজ করছে বলেও বলেন তিনি।

এছাড়াও আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ভর্তি পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা হচ্ছে বলেও প্রগতিশীলের শিক্ষকরা অভিযোগ তুলেন।

নীল লের পাঠানো সংবা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নীল ল ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্যের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বরাবরই সোচ্চার। এরই ধারাবাহিকতায় নীল দল গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) ‘উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাে মানববন্ধন’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি পালন করে। উক্ত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নীল লের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়ন ও বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের প্রাপ্য অধিকার আায়করণের জন্য উপাচার্যের বিরুদ্ধে নি¤েœাক্ত অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং তা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।

১। উপাচার্য নিয়োগ শর্ত ১(ঘ) লঙ্ঘন করে অধিকাংশ সময় ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করেন এবং এসময়ে অন্য কাউকে রুটিন ায়িত্ব না ওেয়ায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘিœত হয়। ২। ৫৪ তম সিন্ডিকেট সভায় ০৯ জন শিক্ষককে পদোন্নতি বঞ্চিতকরণ। ৩। এফসি ও সিন্ডিকেট সভার অনুমোদন ছাড়াই পদোন্নতিজনিত ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা। ৪। অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের জন্য পদক্ষেপ না নেওয়া। ৫। যোগ্যতা অর্জন শর্তেও ব্যক্তিবিশেষে ভাইভা কার্ড ইস্যু না করা। ৬। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ ও শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিকরণ। ৭। উপাচার্য একাই ১৩ (তের) টি পদ কুক্ষিগত রাখায় শিক্ষা কার্যক্রমের গতিশীলতা পাচ্ছে না।

গত বুধবার বিশ্ববদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীরের অপসারণ চেয়ে নীল ল উপাচার্য বরাবর চিঠি প্রেরণ করে। চিঠিতে মুহাম্ম ইব্রাহীম কবীরের বিরুদ্ধে সহকারী প্রক্টর ও বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমানের সাথে অসদাচারণ; বিভিন্ন াপ্তরিক চিঠি ইস্যুতে বিলম্ব করে নানাবিধ সঙ্কট সৃষ্টি; শিক্ষকগণের ছুটি, এনওসি, প্রত্যায়নপত্র ও অভিজ্ঞতার সনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; এবং তার চুক্তিভিত্তিক চাকুরির ১১টি শর্তের কোথাও সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের কোন কথাই উল্লেখ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন রিকুইজেশন ছাড়াই ব্যক্তিগত কাজে যত্র-তত্র ব্যবহারসহ, অনেকগুলো অভিযোগে তার অপসারণ চাওয়া হয়।

অপর সংগঠনের শিক্ষকদের বক্তব্য প্রমাণ করে, নীল লে’র উল্লিখিত (মানববন্ধন ও স্মারকলিপি) কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আজকে তারে মানববন্ধন কর্মসূচি। মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের পক্ষে কোনরূপ াবি না জানিয়ে শুধু নীল দলকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে শিক্ষকরে বিরুদ্ধে কটাক্ষ ও বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকদের প্রতি কটাক্ষ করে শিষ্টাচার বর্হিভূত তাদের বক্তব্য আমাদের ভীষণভাবে আহত করেছে।