বেরোবিতে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শেষ আজ মধ্যরাতে : থাকছে বেশ কিছু সংযোজন-বিয়োজন

এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আসন্ন স্নাতক (সম্মান), বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং বিবিএ কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাত (১২টা পর্যন্ত)। তবে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেশ কিছু বিষয় সংযোজন ও বিয়োজন করেছে।

ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ ও ইউনিটভুক্ত বিভাগগুলোর ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন শর্ত, নেগেটিভ মার্কিং চালু, কোটা বাতিল, আসন বৃদ্ধিকরণ, পাশ নম্বর কমানোসহ বেশ সংযোজন-বিয়োজন করেছে বর্তমান প্রশাসন।

ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ ও ইউনিটভুক্ত বিভাগগুলোর ভর্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্ত: গত বছরে এ ইউনিটভুক্ত কলা অনুষদে এমসিকিউ ৮০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় নূন্যতম ১৫ ও ইংরেজিতে নূন্যতম ১০ নম্বরসহ পাশ নম্বর ৪০ থাকলেও এবার তা কমিয়ে বাংলা ১৩ ও ইংরেজিতে ৮ নম্বরসহ পাশ নম্বর ৩৫ করা হয়েছে।এ ক্ষেত্রে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জন্য বাংলায় নূন্যতম ১০ ও ইংরেজিতে নূন্যতম ১০ ও সাধারণ জ্ঞান এ নূন্যতম ১০ নম্বরসহ পাশ নম্বর ৪০ এ পরিবর্তে এবার যথাক্রমে ৮, ৮ ও ৮ নম্বরসহ পাশ নম্বর ৩৫ করা হয়েছে। বি ইউনিটভুক্ত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তির ক্ষেত্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে বাংলায় ৮ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বরের পরিবর্তে এবার যথাক্রমে ৬ ও ৮ নম্বরসহ পাশ নম্বর ৩৫ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সি ইউনিটভুক্ত বিজনেজ অনুষদে এমসিকিউ পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর বন্টনের ক্ষেত্রে এক্স গ্রুপ (আবশ্যিক)এ গতবার বাংলা-২০ ও ইংরেজি-২০ সহ মোট ৪০ থাকলেও এবার এর সাথে আইসিটি অংশ (১০ নম্বর)সংযুক্ত করে ৫০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।ওয়াই গ্রুপ-এ গতবার এইচএসসি ব্যবসায় শাখায় ৪০; সাধারণ জ্ঞান ও আইকিউ (পরীক্ষায়) ৪০ (মোট ৮০) থাকলেও এবার দুটোতেই ১০ করে কমিয়ে ৬০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় পাশ নম্বরের ক্ষেত্রে বাংলায় ৮, ইংরেজিতে ১০ ও ওয়াই গ্রুপ-এ ২০ নম্বর নির্ধারণ থাকলেও এ বছর তা পরিবর্তন করে বাংলায় ৮, ইংরেজিতে ৮ ও ওয়াই গ্রুপ-এ ১৫ নম্বর নির্ধারণ করে পাশ নম্বর ৩৫ করা হয়েছে।

ডি ইউনিটভুক্ত বিজ্ঞান অনুষদের ক্ষেত্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে গণিত, পদার্থ ও রসায়ন বিভাগে ইংরেজিতে নূন্যতম ৮ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১০ এর পরিবর্তে যথাক্রমে ৬ ও ৮ এবং পরিসংখ্যানে ইংরেজিতে ৮ ও গণিতে ১০ এর পরিবর্তে যথাক্রমে ৬ ও ৮ নম্বর নির্ধারণ করে পাশ নম্বর ৩৫ করা হয়েছে। ই ইউনিটভুক্ত প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদে এমসিকিউ বিষয় ও নম্বর বন্টনের ক্ষেত্রে গত বছর ইংরেজি ২০ পদার্থ ও গণিত বিষয়ে ৩০ করে থাকলেও এবার পরিবর্তন করে ইংরেজি ১০ ও আইসিটিতে এই প্রথম ১০ নম্বর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৭ ও গণিত ও পদার্থ বিষয়ে পৃথকভাবে ১৫ নম্বর গত বছরের পরীক্ষায় নির্ধারণ থাকলেও এবার ইংরেজিতে ৪, আইসিটিতে ৪ এবং গণিত ও পদার্থ বিষয়ে পৃথকভাবে ১৩ নম্বর পেতে হবে।

এফ ইউনিটভুক্ত বিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের বিষয় ও নম্বর বন্টনের ক্ষেত্রেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। অনুষদটির এমসিকিউ বিষয় ও নম্বর বন্টনের ক্ষেত্রে গত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি-২০ সাধারণ জ্ঞান-২০ ও দক্ষতা নিরুপণ বিষয়ে ৪০ নম্বর (সহ মোট ৮০) থাকলেও এবার তিনটি শাখায় ভাগ করে বিজ্ঞান শাখায় ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন ও জীব/গণিত বিষয়ে ২০ নম্বর নির্ধারণ এবং মানবিক ও ব্যবসায় শাখায় পূর্বের সাধারণ নিয়মই [ইংরেজি-২০ সাধারণ জ্ঞান-২০ ও দক্ষতা নিরুপণ বিষয়ে ৪০ নম্বর (সহ মোট ৮০)] বহাল রাখা হয়েছে।

নেগেটিভ মার্কিং চালু: এবারই প্রথম চালু করা হয়েছে নেগেটিভ মার্কিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর। অর্থাৎ প্রতি চারটি প্রশ্নের উত্তর ভুল হলে এক মার্ক কাটা যাবে প্রাপ্ত মোট নম্বর হতে।

পাশ নম্বর কমানো: পাশ নম্বর গতবারের তুলনায় ৫ নম্বর কমিয়ে প্রতিটি অনুষদের বিভাগগুলোতে ৩৫ করা হয়েছে ।

কোটা বাতিল: গতবার এবং তার দুই বছর আগে বিলুপ্ত ছিটমহল অধিবাসী কোটা ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) কোটা চালু করে সাবেক প্রশাসন । কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গ কোটায় কোনো ভর্তি প্রার্থী পাওয়া যায়নি গত দুই বছর।

আসন বৃদ্ধি: গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় ৮৫ টি আসন বাড়িয়ে ১২৩০ থেকে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩১৫ টি। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৩০টি, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে ৫টি, বিজ্ঞান অনুষদে ৪০ টি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে ১০ টি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে।

এই প্রথম নেগেটিভ মার্কিং চালুসহ অন্যান্য সংযোজন-বিয়োজনের ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ শুক্রবার উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এক মুঠোফোনে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়াতে নেগেটিভ মার্কিং চালু করা হয়েছে।বিভিন্ন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অধিকতর সুযোগ প্রদান করতে পাশ নম্বর পাঁচ কমিয়ে ৩৫ করা হয়েছে।একই সাথে আসনও বৃদ্ধি করা হয়েছে ৮৫ টি। কোটা বাতিলে বিষয়ে বলেন, এখন আর ছিটমহল নেই। সব ছিটমহল দেশের সাথে অঙ্গীভূত করা হয়েছে।তাই এ কোটা বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া)মানুষদের সামাজিকভাবে অন্য চোখে দেখা হয় এবং গত দুই বছর কোনো তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী ভর্তি হতে আসেনি। তাই এটি বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে ভর্তি আবেদনের সময়সীমা আর বাড়ানো হবেনা বলেও তিনি জানান।

ইউনিটভিত্তিক টাকার পরিমাণ পূর্বনির্ধারিত রয়েছে।ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন পূর্বের ন্যায় এবারও বহাল রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর, মেরোরিযুক্ত ঘড়িসহ সকল ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (www.brur.ac.bd) থেকে পাওয়া যাবে।