বেরোবি’র ভর্তি জালিয়াতিতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত : সক্রিয় হচ্ছে গঠিত কমিটি

বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ( বেরোবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি জালিয়াতির সাথে পাঁচটি জালিয়াত চক্র জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুটি চক্রের চার জালিয়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাকি তিন চক্রের জালিয়াতরে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি মঙ্গলবার এক বৈঠকের মাধ্যমে বুধবার থেকে তাদের সক্রিয় কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছে সদস্য সচিব মুহা: শামসুজ্জামান।

পুলিশের সূত্রমতে, জালিয়াতির ঘটনায় আটক ছয় শিক্ষার্থীর পিছনে এই পাঁচটি চক্র কাজ করেছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রথমে তারা প্রক্সি দেয়া এবং পরে সাক্ষাতকার সম্পন্ন করে দেয়ার কন্টাক্ট নেয়। এই ছয় শিক্ষার্থী আটকের পর জালিয়াতরা প্রত্যেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের ব্যবহৃত ফোন নাম্বার ও ফেসবুক আইডির হদিস মিলছে না। যারা এসব চক্রে কাজ করেছে তাদের প্রত্যেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। জালিয়াতরা পলাতক থাকায় তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এই পাঁচটি চক্রের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা ভর্তি জালিয়াতিতে সহযোগিতা করে াকে। তাদের সহায়তায় এসব চক্র কয়েকবছর থেকেই ভর্তি জালিয়াতি করে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, জালিয়াতির অভিযোগে ছয় শিক্ষার্থীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলেও আরও অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সাে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। আর একারণেই জালিয়াতদের ধরতে সময়ক্ষেপন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় সবচেয়ে আলোচিত সেই আন্টির পরিচয় মিলেছে। রংপুর নগরীর খামারমোড় এলাকায় বসবাস করেন সেলিমা বেগম (৫০) নামের সেই আন্টি। তার স্বামীর ডাক নাম মনা বলে জানিয়েছে পুলিশ। পেশায় গৃহিনী সেলিমা বেগম। সাক্ষাতকারে জালিয়াতির অভিযোগে লালমনিরহাটের সামস নামের এক শিক্ষার্থী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই সেলিমা রহমান পলাতক রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেরোবি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ও রংপুর কোতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) মহিব্বুল ইসলাম বলেন, জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পিছনে একাধিক চক্র কাজ করেছে। এসব চক্রের প্রত্যেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। জালিয়াতরা বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ভর্তি করে দেয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জালিয়াতির ঘটনায় ৬ শিক্ষার্থী আটক হওয়ায় কৌশল অবলম্বন করেছে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। তারা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তবে তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোন সময় তারা গ্রেফতার হতে পারে। সেই ‘আন্টি’কেও ধরতে জোর অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, গত ২৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় শনাক্ত করা ভূয়া পরীক্ষার্থী এবং তাদের সঙ্গে জড়িতদের ব্যপারে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে অতি শীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দিতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কমিটির সদস্য সচিব মুহা: শামসুজ্জামান জানান, ২৮ ডিসেম্বর কমিটি গঠিত হলেও তিনি চিঠি পেয়েছেন ৩১ ডিসেম্বর। তবে মঙ্গলবার তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে মিটিং করেছে কমিটি। বুধবার থেকে তথ্যানুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হবে এবং এ মর্মে সহযোগিতা করার জন্য ইউনিট সমন্বয়ক, প্রক্টর, জনসংযোগ বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি প্রদান করা হবে। যত দ্রæত সম্ভব রিপোর্টটি প্রকাশ করা হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।