ব্লু হোয়েল’র ফাঁদ থেকে যেভাবে ছাত্রের প্রাণ বাঁচালেন শিক্ষক

ভারতের রাজস্থানে ভয়ানক অনলাইন ভিডিও গেম ‘ব্লু হোয়েল’ এর ফাঁদ থেকে এক ছাত্রের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তার শিক্ষক। জয়পুরের ঝুনঝুন জেলায় ওই ছাত্র গেমটিতে আসক্ত হয়ে পড়েছিল।

ফলে তার জন্য অপেক্ষা করছিল চূড়ান্ত পরিণতি আত্মহনন। কিন্তু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এগিয়ে আসেন সেই ছাত্রের স্কুল শিক্ষক।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ঝুনঝুন জেলার জাতীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সেই ছাত্র গোপনে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু স্কুলের এক শিক্ষক বেশ কয়েকদিন ছেলেটির আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই ছাত্র তখন স্বীকার করে যে, কদিন ধরে সে ভয়ানক ব্লু হোয়েল গেম খেলছে। এরই মধ্যে সে ৩টি স্তরও অতিক্রম করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি আরও জানায়, শুধু সেই নয়, তার সঙ্গে আরও দুই বন্ধু ভিডিও গেমটির বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়ে। ফলে আত্মঘাতি গেমটির ফাঁদে কেউ যাতে পা না দেয়, সে ব্যাপারে সচেতনতামূলক পরামর্শ এখন দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঝুনঝুন জেলার কালেক্টর দিনেশ কুমার ইয়াদভ জানান, ওই ছাত্রের মোবাইলে গেমটি খুঁজে পাওয়া গেছে। সেটি এখন পরীক্ষার জন্য পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ধরা পড়ার পর ছেলেটি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়লেও এখন তার চিকিৎসা চলছে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অল্প বয়সীদের জন্য ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে অনলাইন গেম ‘ব্লু হোয়েল’। পশ্চিমা দেশগুলোর পর এশিয়াতেও এই গেম ভয়ানক উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ভিডিও গেমটি যিনি খেলেন তার শেষ পরিণতি হয় আত্মহত্যা। গেমটিও সেখানেই শেষ হয়!

গেমটিকে নিয়ে এখনও অন্ধকারে পশ্চিমা প্রশাসন। কৌতুহল বশে এই গেমটি যারা খেলতে শুরু করেন, পরবর্তীতে ফিরে আসার সুযোগ তাদের থাকে না।

ভারতে তো বটেই, খোদ বাংলাদেশেও ‘ব্লু হোয়েল’ ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি যার বলি হয়েছে স্বর্ণা নামের ঢাকার এক কিশোরী। গেমের শেষ ধাপে এসে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্লু হোয়েল গেমে ৫০টি ধাপ রয়েছে। একাধিক কিউরেটর এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের নির্দেশেই গেম এগিয়ে চলে। সেখান থেকে সহজে বের হওয়া যায় না। আবার কেউ বের হতে চাইলেও তাদের খেলার জন্য বাধ্য করতে পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

আর এই গেমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যেমন: ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা, সারা গায়ে আঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, কখনও ভোরে একাকি ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি।

চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে তার ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়। ২৭তম দিনে হাত কেটে ব্লু হোয়েলের ছবি আঁকতে হয়। সব ধাপ পার হওয়ার পর ৫০তম চ্যালেঞ্জ হলো আত্মহত্যা। আর সেখানেই গেমস জয়ের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু যে ব্যক্তি খেলেন, তাকে আর পাওয়া যায় না।

সাধারণভাবে গোপন গ্রুপের মধ্যে অপারেট করা হয় এই গেম। এক্ষেত্রে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো জনপ্রিয় স্যোশাল প্লাটফর্মকে কাজে লাগায় কিউরেটরা।

রাশিয়ায় শুরু হলেও এই গেমের শিকার এখন এশিয়ার অনেক দেশ। ভারতে গত দু’মাস ধরে ব্লু হোয়েল নিয়ে চলছে শোরগোল। স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ব্লু হোয়েল লিংক সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে রাশিয়ায় ব্লু হোয়েল গেমের কিউরেটর সন্দেহে ফিলিপ বুদেকিনকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জেরায় তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জের যারা শিকার তারা সমাজে বেঁচে থাকার যোগ্য নন। তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে বরং সমাজ সংস্কারের কাজই হচ্ছে।