ভয়ংকর বন্যায় যেভাবে থমকে গেছে ভারতের কেরালা

হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারত জুড়ে বন্যায় নিহতের সংখ্যা নয়শোর বেশি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

তবে বন্যার চেহারা সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে কেরালায়।

কেবল গত ৩৬ ঘন্টাতেই সেখানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৬০ জনের। দুই লক্ষেরও বেশী মানুষ গৃহহীন।

সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সেনা, নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও বিমান বাহিনীকে উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে।

মালয়লিরা তাঁদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওনাম পালন না করে বন্যার্তদের সাহায্যে করছেন।

কেরালায় কেন দুযোর্গ

ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে কেরালাতেই সব থেকে বৃষ্টিপাত হয় প্রতিবছর। কিন্তু গত প্রায় দশদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে সেখানে।

মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলছেন গত এক শতাব্দীর মধ্যে এরকম বন্যা সেখানে হয় নি।

শুক্রবার রাজধানী থিরুভনন্তপুরমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন যে রাজ্যের ১৪টির মধ্যে একটি বাদে বাকি ১৩টি জেলাই বন্যার কবলে পড়েছে।

রাজ্য জুড়েই চূড়ান্ত সতকর্তা জারি করা হলেও সবথেকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে আলাপুঝা, থ্রিসুর আর এর্ণাকুলাম জেলাগুলিতে।

বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবারই কেরালায় পৌঁছচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

দেড় হাজারেরও বেশী ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে গোটা রাজ্যে।

উত্তর পরুভার এলাকার একটি কলেজের ত্রাণ শিবিরে পরিবার সহ আশ্রয় নিয়েছেন মি. বিজু।

টেলিফোনে তিনি বিবিসিকে বলছিলেন “আরও প্রায় হাজার চারেক লোকের সঙ্গে একটি কলেজে আছি। গ্রামে একটি নদী রয়েছে, সেখানে অনেক মানুষ আটকিয়ে রয়েছেন। আমাদের শিবিরে প্রায় হাজারখানেক শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ রয়েছেন, কিন্তু পাণীয় জল, খাবার কিছুই প্রায় নেই। বিদ্যুৎও নেই।”

সরকার বলছে রাজ্যের ৮০টি বাঁধ খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে তারা।

উদ্ধার কাজে সেনা, বিপর্যয মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গেই পৌঁছিয়েছে নৌবাহিনী আর উপকূলরক্ষীবাহিনীর বেশ কয়েকটি জাহাজ। নামানো হয়েছে প্রায় ২০০ নৌকা। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিপর্যয় মোবাকিলা বাহিনীর আরও সদস্য পৌঁছচ্ছেন সেরাজ্যে।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলি থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মানুষকে উদ্ধার করে আনা হচ্ছে।

কোচি শহরের সাংবাদিক অনুভা জর্জ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি নিয়মিত শুনতে পাচ্ছেন হেলিকপ্টার উড়ে যাচ্ছে বাড়ির ওপর দিয়ে।

মিজ জর্জের কথায়, “জনজীবন একেবারে স্তব্ধ। মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে বেশ নিচু দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে যাচ্ছে সবথেকে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে। দোকানপাট বন্ধ। কোচিতে মেট্রো রেল বন্ধ। ট্রেন চলছে না। রাজ্যের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওনাম। এই সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মধ্য প্রাচ্য থেকে আসেন, তারা আটকে পড়েছেন।”

এই বিপর্যয়ের মধ্যে কেরালার মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাঁরা এবছর ওনাম উৎসব পালন করবেন না। সেই টাকা বন্যার্তদের সাহয্যের জন্য তাঁরা রিলিফ ফান্ডে জমা দিচ্ছেন। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা চাদা তুলছে। অর্থ সাহায্য করছে অতি প্রভাবশালী মালয়লাম সিনেমা জগতও।

অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী কর্ণাটকেরও বেশ কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ী এলাকাগুলোতে ধস নামছে।