ভাইরাল ছবি শেয়ার দিচ্ছেন, ছবিটা নকল নয়তো?

একটি ভালো ছবি হাজার কথার সমান। সময়ের প্রামাণ্য দলিল। স্থিরচিত্রের সেই দলিল নিয়ে ইন্টারনেটে কী কারসাজিই না হয়! এখন তো এক ঘটনার ছবি আরেক ঘটনায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে হামেশাই। যেমন ধরুন, রোহিঙ্গা বিষয়ে। রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন যে ভয়াবহতার সীমাও ছাড়িয়ে গেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এমন অনেক ছবি ছড়ানো হচ্ছে, যেগুলো বিভ্রান্তিমূলক। এসব ছবির বড় অংশই ভুয়া বা অন্য কোনো ঘটনার। এমনকি কোনো চলচ্চিত্রের স্থির দৃশ্যকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ছবি বলে দেখানো হয়েছে।

শুধু রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশে এর আগেও অনেক বিষয়ে ভুয়া ছবি নিয়ে তোলপাড় ঘটে গেছে। এ নিয়ে হাঙ্গামা পর্যন্ত বেঁধেছে। বাড়িঘরেও আগুন জ্বলেছে। ভুয়া ছবি আপলোডকারীদের হাত থেকে খেলাধুলা, রাজনীতি, সামাজিক সমস্যাসহ কোনো কিছুরই নিস্তার নেই।

দেশে যখন যে বিষয় নিয়ে হইচই চলে, তখনই ইন্টারনেটে ছাড়া হয় প্রচুর ভুয়া ছবি। এতে মানুষের ভাবনা ভুল পথে পরিচালিত হয়, যেখান থেকে ছড়াতে পারে বড় ধরনের সহিংসতা।

আর তাই বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে ইন্টারনেটে কোন ছবি আসল, কোন ছবি নকল—তা চেনার উপায় জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া ছবি দেখে আপনার ভাবনা যেন ভুল পথে পরিচালিত না হয়, সে জন্য জেনে রাখুন আসল ছবি চেনার কিছু উপায়:

গুগল সার্চ থেকে সমাধান
যে ছবিটি আপনি দেখছেন তা আসল না নকল, সেটা বের করতে গুগলের দ্বারস্থ হতে পারেন। গুগল করে ছবির সূত্র বের করা যায়। ‘গুগল’ লিখে সার্চ করলে যে পেজটা আসবে তার ওপরে কিছু ট্যাগ থাকে—ইমেজ, ম্যাপ, প্লে, ইউটিউব, নিউজ ইত্যাদি। ‘ইমেজ’ বাটনে ক্লিক করলে সার্চের মধ্যে ডানে দেখা যাবে ক্যামেরার একটি আইকন। এখান থেকে ছবির সূত্র বের করার পদ্ধতি দুটি—১. ছবির ‘ইউআরএল’ (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর‍) দিয়ে সার্চ করুন। এটা ছবির নির্দিষ্ট ঠিকানা বহন করে। ২. ছবি আপলোড করে সার্চ করতে পারেন। এটা বেশ নির্ভরযোগ্য উপায়। আপলোডকৃত ছবি সার্চ দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ছবিটির নানারকম লিংক দেখতে পাবেন। মানে ছবিটা যে ওয়েবসাইটেই থাকুক না কেন সেটা আপনাকে দেখিয়ে দেবে। তখন আপনি নিজেই মিলিয়ে নিতে পারবেন, ছবিটা আসল না নকল।

ইজ ইট ট্রু ?
অত্যাধুনিক সব ফটো এডিটিং সফটওয়্যার চলে আসায় সাদা চোখে ছবির আসল-নকল বুঝতে পারা সত্যিই অনেক কঠিন ব্যাপার। কিছু এডিট করা ছবি দেখে তো বিশ্বাস করা কঠিন যে, তা নকল! কিন্তু আধুনিক এডিটিং সফটওয়্যার যেমন আছে তেমনি আছে নকল ছবি চেনার কিছু অত্যাধুনিক সাইটও। যেমন ‘ইজইটট্রু’—এ সাইটটি আপনাকে জানিয়ে দেবে কোনো এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়ে কি না।
‘জেপিইজি সিগনেচার অ্যানালাইসিস’ প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে সাইটটি তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত সব ডিজিটাল ক্যামেরাতেই এনকোডিং এবং কমপ্রেসনের জন্য কিছু অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরা মডেল এবং সেসব অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ করে ‘ইজইটট্রু’ আপনাকে জানিয়ে দেবে ছবিটি সম্পাদন (এডিট) করা কি না। এ ছাড়া ছবিতে ক্যামেরা সিগনেচার অক্ষুণ্ন রেখে কোনো কাজ সম্পাদন করা হয়েছে কি না, সেটাও দেখে থাকে এ সাইট। ছবি কোত্থেকে নেওয়া হয়েছে সেটাও দেখা যায় ‘ইজইটট্রু’তে।

ফাইন্ডএক্সিফ.কম
নকল ছবি চেনার জন্য এটিও বেশ কার্যকরী ফ্রি ‘টুল’। যে ছবিটি নিয়ে আপনি সন্দেহে ভুগছেন, সেই ছবি কিংবা ছবিটির ‘রেফারেন্স’ এখানে আপলোড করুন। সাইটটি নিজেই সেই ছবির ‘এক্সিফ ডাটা’ খুঁজে বের করবে। মানে, কখন কোন ক্যামেরা দিয়ে ছবিটি তোলা হয়েছে, ছবির বৈশিষ্ট্য এমনকি কোথায় তোলা হয়েছে, সেটাও জানিয়ে দিতে সক্ষম ফাইন্ডএক্সিফ.কম।

ফটো ফরেনসিকস
ছবির ভুল বের করাই সাইট। ছবির নানা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এ সাইটটি আপনাকে জানিয়ে দেবে ‘এডিটিং’য়ে কি কি সংযোজন করা হয়েছে। মানে, ছবিটি যদি ‘এডিট’ করা হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে কী কী জুড়ে দেওয়া হয়েছে তা জানা যাবে। এ ছাড়াও ছবির ‘এক্সিফ ডাটা’ প্রদানেও সক্ষম ফটো ফরেনসিকস সাইট।

টিনআই.কম
সন্দেহজনক ছবি কিংবা তার ‘ইউআরএল’ এ সাইটে আপলোড করুন। একইরকম ছবি ইন্টারনেটে আরও আছে কি না, তা খুঁজে বের করবে টিনআই,কম। ছবিটি যদি নকল হয়ে থাকে তাহলে আপনি আসল ছবিটির উৎস বের করতে পারবেন। এ ছাড়াও ছবিটি কে বা কোন সাইট নকল করেছে সেটাও ধরা যায় এখানে।

শেষ কথা
ছবি নিয়ে সন্দেহ হলে উপস্থিত বুদ্ধি খুব কাজে দেয়। ঘটনার সঙ্গে সেই ছবি কতটা প্রাসঙ্গিক তা আগে ভেবে দেখুন। রমরমা ইন্টারনেটের এই যুগে কোনো ঘটনা ঘটলে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। মানে জানা-শোনা থাকলে আপনি এমনিতেই ছবির আসল-নকল ধরতে পারবেন। কিন্তু এরপরও ভুয়া ছবি আপলোড কারিদের হাত থেকে নিস্তার নেই। কারণ, আপনার মতো তারাও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে কুকর্মটি করছে। অতএব কোনো ছবি নিয়ে সন্দেহ হলে এসব সাইটের দ্বারস্থ হতে পারেন। ভুয়া ছবি সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারলে বাকিদের ভুল ভাঙানো কিন্তু আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।