ভাইয়ের পাশে ভাই, মৃত মায়ের কোলে সন্তানের লাশ

পাহাড় ধসের ট্র্যাজেডির পর উদ্ধার অভিযানে বের হয়ে আসছে একের পর এক লাশ। কয়েক মাসের শিশু থেকে অশীতিপর মানুষের মৃতদেহ উদ্ধারের সময় উদ্ধারকর্মীরাও নিজেদের কষ্ট এবং আবেগ আড়াল করতে পারছেন না।

উদ্ধার অভিযানে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ বছরের ভাইকে শেষ আশ্রয় হিসেবে আঁকড়ে ধরা তিন বছরের ভাইয়ের মৃতদেহ। কোথাও দেখা গেছে মা তার দুধের সন্তানকে আড়াল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভূমিধস কাউকে বাঁচিয়ে রাখেনি। যেমন বাঁচতে পারেনি কাঁধে সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা কোন বাবা।

মাটির মানুষগুলো শেষ পর্যন্ত মাটিতেই মিশে গেছেন। মাটিই হয়েছে তাদের শেষ ঠিকানা।

দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অনেকসময় সাংবাদিকতায় বলা হয়, একই পরিবারের অতোজন মারা গেছেন কিংবা একই পরিবারের এতোজন ভুক্তভোগী।

কিন্তু, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং চট্টগ্রামে সোমবার রাতে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে যে মানুষগুলোর মৃত্যু হয়েছে সেখানে এরকম পরিবার অনেক। তাদের অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে, মোমবাতির আলোতে অস্ত্রোপচার হওয়ার পর বেঁচে থাকলেও জানতে পারছে না, প্রিয়জনটি আর বেঁচে নেই।

পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ১৩৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর ধসে পড়া মাটির নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছে, তাদের বেশিরভাগই বেঁচে নেই।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আহত-নিহত অনেককে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও আরো কিছু মৃতদেহ উদ্ধারের আশঙ্কা রয়েছে। এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছে মাটির নিচে।

রাঙামাটির ডিসি মঞ্জুরুল মান্নান বলেন, এ পর্যন্ত ৯৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে যে পৌর এলাকায় অনেকেই নিখোঁজ।

‘আশা করি কালকেই (শুক্রবার) আমরা অভিযান শেষ করতে পারবো,’ জানিয়ে তিনি বলেন: যারা উদ্ধার হয়েছেন তাদের জন্য আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।

তবে উদ্ধার অভিযানে প্রয়োজনের তুলনায় লোকবলের সংকট আছে জানিয়ে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, বৃষ্টি কমলে কিছু সাধারণ জনগণ আমাদের সাহায্য করেছিলো। পুলিশ সদস্যরা এখানে ছিলেন। রোডও বন্ধ। ফলে কিছু টিম আসতে পারেনি।

মনসুর আহম্মেদ সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দেখে এসে জানান, উদ্ধার কাজে যেমন জনবলের সংকট আছে তেমনই সংকট আছে যন্ত্রপাতির। এখানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট, পুলিশ সদস্যরা আর সাধারণ জনগণ। এভাবে উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য হবে। পাহাড় ধসের পরে এই এলাকায় মাটির ঢিবি তৈরি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ ফিট উঁচু। সেগুলো সরাতেও প্রচুর জনবল প্রযোজন। তাছাড়া পুরোপুরিই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।