ভারতের সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান হবে : প্রধানমন্ত্রী

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত সব সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সমাধান হবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাকিগুলোও হয়ে যাবে।

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা যৌথভাবে ভবনটি উদ্বোধন করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দুই দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ছিলেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও।
২০১০ সালে এই ভবনটি নির্মাণের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়। আর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি এবং বাংলাদেশের অর্থায়নে ভবনটি নির্মিত হয়।

এই ভবনটি ভবিষ্যতে দুই বাংলার তীর্থস্থান হয়ে যাবে বলে আশার কথা বলেন মমতা।

প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ‘এই ভবনটিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের ভাষা, সাহিত্যের চর্চা হবে। এটা সিম্বল হবে এখানে দুই বাংলার মানুষ এক হয়ে সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐহিত্যের চর্চা করতে পারব। গবেষণা করতে পারব, জানতে পারব ইতিহাস।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা, উন্নয়নের পথে দুই দেশের একসঙ্গে যাত্রা এবং তার আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরেন।

বর্তমান সরকারের নয় বছরে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে। কার্যকর হয়েছে মুজিব-ইন্দিরা স্থল সীমান্ত চুক্তি, বিনিময় হয়েছে ছিটমহল, যাতে ১০ হাজার একর জমি বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ।

দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে থাকা সীমান্ত হত্যাও কমে এসেছে দুই পক্ষের পারস্পরিক আলোচনা এবং উদ্যোগে। তবে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় হতাশা আছে বাংলাদেশে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ থাকলে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু আমরা কিন্তু সমস্যাগুলো এক এক করে সমাধান করে ফেলেছি। হয়ত কিছু যা বাকি, আমি সে কথা বলে এই চমৎকার অনুষ্ঠান নষ্ট করতে চাই না। কিন্তু আমি আশা করি যেকোনো সমস্যা আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে সমাধান করতে পারব।’

‘আমরা চাই এই অঞ্চলটা একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হোক।… সকলে মিলে এই অঞ্চলটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে, আমরা সেটাই চাই।’

দুই দেশের মতা দুই বাংলার সম্পর্কও এগিয়ে নিতে চান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের দুই বাংলার মধ্যে দুই বাংলার মধ্যে যে সম্পর্ক, তা আরও সুন্দর হোক, এটা আমরা চাই।’

শেখ হাসিনার মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের শত্রু একটাই এবং সেটা হলো দারিদ্র্য। আর এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হোক, ভারত হোক বা যেকোনো দেশ হোক, আমরা এই অঞ্চলটাকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই, ক্ষুধামুক্ত করতে চাই।’

‘সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে আমাদের উন্নয়নে ভারত যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

‘আমরা চাই আমাদের দেশটাকে উন্নত করতে, ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত করতে। সে জন্য মনে করি, প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটা সদ্ভাব থাকা সব সময় জরুরি।’

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা, মুজিব ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ছিটমহল বিনিময়ের কথাও তুলে ধরে ভারতকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি, বিশ্বের অনেক দেশে দেখবেন ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যুদ্ধ লেগে আছে। কিন্তু আমরা ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশ একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করেছি।’

‘বিশ্বে এটাই মনে হয় দৃষ্টান্ত, দুই প্রতিবেশী দেশ ছিটমহল করতে পারে আনন্দঘন উৎসবমুখর পরিবেশে।’

দুই দিনের সফরের প্রথম দিন বেলা ১১টার পর প্রধানমন্ত্রী যান বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন।

মোদি সেখানে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান পূর্ণতা পেয়েছে।

এই অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ সময় বেলা একাটর দিকে দুই নেতা একসঙ্গে যান বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই ভবনটি উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি।’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুকের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে এই ভবনটি হয়েছে আরও উৎফুল্ল শেখ হাসিনা। বলেন, ‘শান্তিনিকেতন কেবল ভারতের নয়, …তার অধিকাংশ কবিতা বাংলাদেশের মাটিতে বসে লেখা। আমাদের অধিকারটা একটু বেশি আছে বলে আমি মনে করি।’