ভারতে আটক ব্রিটিশ বাংলাদেশিকে নিয়ে রহস্য

ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জঙ্গি দলে নিয়োগদানের অভিযোগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে আটক করেছে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। সামিউন রহমান নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদায় নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি হিন্দু সোমবার এক প্রতিবেদনে জানায়, আটক ব্যক্তির সকল তথ্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআই (National Investigation Agency)এর কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

দিল্লি পুলিশ গত মাসে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে আটক করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাস বিরোধী সমঝোতার আওতায় বরাবরই এনআইএ এবং বাংলাদেশের র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন তথ্য বিনিময় করে থাকে। সেই সুত্রেই আটক ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ দূতাবাস আটক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদন জানায়। দূতাবাসের এক সুত্র দি হিন্দুকে জানিয়েছে, সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সামিউন রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয় ভারত।

প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, রহমান সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি মিনি ক্যাব কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করত। গত ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশ তাকে আটকও করে। সেই সময় তার বিরুদ্ধে সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়েদার অঙ্গসংগঠন আল নুসরা ফ্রন্টে বাংলাদেশি তরুণদের নিয়োগের অভিযোগ তোলা হয়।

সেই সময় রহমানের পরিবার অভিযোগ করে, সিলেটে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা CAGE রহমানের মুক্তির জন্য তখন উদ্যোগ নেয়। রহমানের গ্রেফতারকে অবৈধ বলেও তারা দাবি জানায়। এছাড়া, সামিউন রহমানের সঙ্গে আল কায়েদা কিংবা আইএসের যোগাযোগের প্রমাণ নেই বলেও জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।

ভারতের সরকারি সুত্র দি হিন্দুকে জানিয়েছে, রহমান ২০১৩ সালের জুলাই মাসে একবার অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। সেই সময় তার বিষয়ে দিল্লি পুলিশ একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করে। সেখানে বলা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশে জঙ্গি সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য তরুণ ও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করছে সামিউন। এবং নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের জঙ্গি সংগঠনগুলোয় নিয়োগে সহায়তা করছে।

আল-কায়েদার মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে সিরিয়ায় ৩ সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নেয় এবং প্রায় বছরখানেক যুদ্ধ করে। নিয়োগ হওয়া তরুণদেরও সেসবের ব্যবস্থা সামিউন করে দিত বলে অভিযোগ রয়েছে। সামিউন সংগঠনের নির্দেশে বাংলাদেশেও সদস্য সংগ্রহের কাজে নামে।

দলের শক্তি বৃদ্ধির জন্য সে সিলেট, হবিগজ্ঞ এবং ঢাকায় বেশ কিছু তরুণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে মিয়ানমার দিয়ে তাদের মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের জন্য চট্টগ্রামের রুট ব্যবহার করে।

অবশ্য সামিউন গ্রেফতারের পর সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়। তিন বছর কারাভোগের পর গত এপ্রিলে ঢাকার কারাগার থেকে সামিউন রহমান মুক্তি পায়। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে সে কোথায় যায় সে ব্যাপারে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারতে কিভাবে প্রবেশ করে সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য ছিল না।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দিল্লি পুলিশ এখন বলছে, সামিউন এপ্রিলে মুক্তি পেলেও জুলাই মাসে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর সে আল-কায়েদার ঘাঁটি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মিজোরাম এবং মনিপুরে রোহিঙ্গাদের পক্ষে লড়াইয়ের অজুহাতে তরুণ ও যুবকদের সংগ্রহের কাজ শুরু করে।