ভারতে হামলার জন্য চীনের নতুন মহড়া!

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই চীনের সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড সামরিক নতুন মহড়া চালিয়েছে। তিব্বতসহ পাঁচটি প্রদেশ রয়েছে এ বাহিনীর আওতায়। তিব্বত সীমান্তবর্তী ডোকলাম নিয়ে ভারতের সঙ্গে গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলছে- এমন সময় এ মহড়া চালানো হল। চীনা এক দৈনিক দাবি করেছে, ভারতে হামলার লক্ষ্যে এ মহড়া চালানো হয়েছে। সম্প্রতি চীন এ ধরনের আরও মহড়া চালিয়েছে।

ভারতের ফার্স্টপোস্ট জানায়, কোনো আগাম ঘোষণা না দিয়ে মহড়া চালানো হয়েছে। মহড়ায় গণমুক্তি ফৌজ পিএলএর বিমান ও সাঁজোয়া ইউনিটসহ ১০টি ইউনিট অংশ নিয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে এ মহড়ার একটি পাঁচ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ। এতে দেখা যায়, টিলার ওপর লক্ষ্যবস্তুকে তাক করে গুলি ছুড়ছে ট্যাংক। এরপরই স্থল লক্ষ্যবস্তুতে তাক করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হেলিকপ্টার। মহড়া কোথায় হয়েছে তা উল্লেখ না করে এতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে মালভূমিতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া হল। এদিকে চীনের লিয়ানহি জাওবাও সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ‘ভারতে দ্রুতগতিতে হামলার জন্য এ মহড়া চালানো হয়েছে।

তবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভুটানের ডোকলামে চীন ও ভারতের মধ্যে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান শিগগিরই হবে। তিনি আশা করেন, বেইজিং এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে। সোমবার নয়াদিল্লিতে ইন্দো-তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রভাবশালী এই মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোকে তিনি জানাতে চান যে ভারত শান্তি চায়। তবে তিনি দাবি করেন, ভারতের ভূখণ্ড সুরক্ষায় তার দেশের বাহিনী সক্ষম। এনডিটিভি জানায়, ইন্দো-তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশ চীন ও ভারতের মধ্যকার ৪০৪৭ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত। জম্মু-কাশ্মীর থেকে অরুণাচল পর্যন্ত বিস্তৃত এই সীমান্ত।

রাশিয়ার সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় ভারত : এদিকে ডোকলাম ইস্যুতে চীনের সঙ্গে চরম উত্তেজনার মধ্যে এ বিষয়ে রাশিয়ার সমর্থন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। বিকাশমান পাঁচটি অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত সংস্থার ব্রিকসের আসন্ন সম্মেলনের আগেই নয়াদিল্লি ওই সমর্থন লাভের চেষ্টা করছে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের একটি সূত্র বলছে, দু’দেশের মধ্যে এ ব্যাপারে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ডোকলাম ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ্যে না আসায় তা ভারতের জন্য ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভারত রাশিয়ার সমর্থনের আশা করছে। তবে সম্প্রতি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ায় এবং চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক জোরালো হওয়ায় ভারতের এই চেষ্টা সফল হওয়ার আশা ক্ষীণ বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকরা।

চীনকে ভারতবিরোধী মনোভাব ত্যাগ করানোর জন্য ভারত গত ৬ মাস ধরে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। চলতি বছরে এনএসজি সদস্যপদ ইস্যুতে ভারত বিরোধিতা থেকে চীনকে বিরত রাখতে ভারত রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। সে জন্য একটি বন্ধু দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করা স্বাভাবিক ব্যাপার। ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে সম্প্রতি প্রস্তুতি বৈঠকের সময় ভারতীয় কর্মকর্তারা রাশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ডোকলাম ইস্যুতে আলোচনা করেছেন। রাশিয়াকে এটা বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে, ডোকলামে সড়ক তৈরির মাধ্যমে চীন স্থিতাবস্থা ভাঙছে, ভারতের নিরাপত্তার জন্য যা বিপজ্জনক। আগামী ৩-৫ সেপ্টেম্বর চীনে ব্রিকস সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যাওয়ার কথা রয়েছে।