ভারী বর্ষণে বোরো নিয়ে বিপাকে কৃষক

টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল। একই অবস্থা নেত্রকোনার কেন্দুয়া ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায়। কেন্দুয়ার মাছুয়াইল বিলের কয়েক শ একর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভৈরবের মেঘনার ক‚লঘেঁষা জোয়ানশাহী হাওরের প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর ধানী জমির পুরোটাই তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান ঘরে তুলতে পারছেন না ওইসব এলাকার কৃষকরা। সব মিলিয়ে ফসল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিংড়া (নাটোর) : ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলের পানি ঢুকেছে সিংড়ার চৌগ্রাম, তাজপুর, ইতালি ও ডাহিয়া বিলে। এতে বিলগুলোর ১০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ৫০ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিনের ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে উপজেলার আড়াই হাজার হেক্টর জমির ধান নুইয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না গৃহস্থরা।

স্থানীয় উত্তর দমদমা গ্রামের কৃষক শমসের বলেন, ২৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। হঠাৎ টানা বর্ষণ ও ঢলের পানিতে ফসল ডুবে গেছে। অধিক টাকা দিয়েও ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না। আমাদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। একই কথা বলেন চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ অঞ্চলের কয়েকটি বিলে পানি ঢুকেছে। এতে শেষ সময়ে এসে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। তবে ইতোমধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

নেত্রকোনা : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কেন্দুয়ার মাছুয়াইল বিলের কয়েক শ একর বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ওই বিলের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তলিয়ে যাওয়া পাকা ধান কচুরিপানায় ঘিরে ফেলেছে। কোনো কোনো কৃষক কোমর পানিতে নেমে ধান কাটছেন। অনেকেই তলিয়ে যাওয়া ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া শ্রমিক সঙ্কটে কৃষকরা ধান কাটতে পারছেন না।

স্থানীয় কৈলাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইসলাম উদ্দিন জানান, সাড়ে সাত বিঘা জমিতে বোরো চাষ করে সামান্য কিছু ফসল কাটতে পেরেছি। তলিয়ে যাওয়ায় বাকিগুলো কাটা সম্ভব হচ্ছে না। এ রকম অনেকের ক্ষেতের ফসল পানির নিচে বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্র জানান, কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বোরো ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানি। তবে মাছুয়াইল বিলের ধান তলিয়ে যাওয়ার কোনো সংবাদ পাইনি।

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : খালে স্লুইসগেট না থাকায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনার কূলঘেঁষা জোয়ানশাহী হাওরের বেশ এলাকার বোরো ধান তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া ওই হাওরের আগানগর, শ্রীনগর ও সাদেকপুর ইউনিয়নের সাড়ে চার হাজার হেক্টর ধানী জমির পুরোটাই তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের। চার কিলোমিটার লম্বা ওরার খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানি ঢুকে ধান তলিয়ে যাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ ফসল রক্ষায় ওই খালের বাঁধে স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষক মোশারফ সিকদার, মঞ্জুর আলীসহ আরো কয়েকজনের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন প্রতিবছরই ওরার খালে স্থায়ী বাঁধসহ স্লুইসগেট নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। আমরা আর আশ্বাস চাই না, বাস্তবায়ন চাই।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ওরার খালে একটি অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর একটি স্লুইসগেট ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।