ভালোবাসা দেখেছেন, এবার ঘৃণা দেখছেন লো!

এক, দুই বছর নয়। দীর্ঘ এক যুগ ধরে জার্মানদের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়ে আসছেন জোয়াকিম লো। দেখেছেন একজন ফুটবল কোচকে জার্মানরা কতটা ভালোবাসতে পারেন। কিন্তু ২০১৮ সালে অদৃশ্য এক ঝড়ে ভালোবাসার সেই পাত্রটা উল্টে গেছে। ভালোবাসার পরিবর্তে এখন ঝড়ছে ঘৃণা। যে কোচকে নিয়ে গর্বের সীমা ছিল না, সেই লো’র প্রতি জার্মানদের হৃদয়ে এখন বরাদ্দ ঘৃণা। সেই ঘৃণা এতোটাই প্রবল যে, কোচের পদ থেকে জোয়াকিম লো’কে ছাটাইয়ের দাবিতে সোচ্চার জার্মানরা!

সাবেক গোলরক্ষক ও কোচ মাইকেল রেইস বলেছেন, প্রতি ১০ জন জার্মানের মধ্যে ৮ জনই লো’র বিদায় চাইছেন। তাদের এক দফা এক দাবি, লো’কে ছাটাই করে দলে আনা হোক পরিবর্তন। অকৃত্রিম ভালোবাসা হঠাৎই ঘৃণায় রূপ নিলেও এজন্য দেশবাসীকে দোষারোপ করতে পারছেন না লো। দায়টা আসলে তারই। তার দল যেভাবে একের পর এক হারের লজ্জায় ডোবাচ্ছে দেশবাসীকে, তাতে ছাটাইয়ের দাবিটা যুক্তি সংগতই।

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি জার্মানি। সেই জার্মানি এবার গড়ে ফেলল নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ‘খারাপ’ এর রেকর্ড। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উয়েফা ন্যাশনস লিগের ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে জার্মানি। এই বছরে খেলা ১১ ম্যাচের মধ্যে এটা জার্মানির ৬ষ্ঠ হার। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে জার্মানি কখনোই এক বছরে এতো বেশি ম্যাচ হারেনি!

শুধু সংখ্যার ভিত্তিতে বেশি হার নয়। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও চরম এক লজ্জার রেকর্ড গড়েছে লো’র দল। সেই ১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর প্রথম বারের মতো বিদায় নেয় গ্রুপপর্ব থেকেই। গ্রুপপর্বের ৩ ম্যাচের দুটিতেই হেরে যায় ৪ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

শুধু তাই নয়। এ নিয়ে টানা ৪ ম্যাচে জয়হীন জার্মানি। ২০০০ সালের পর এই প্রথম হারল টানা দুই ম্যাচে। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর দলে পরিবতর্ন আনার দাবিটা যুক্তি সংগতই। অধিকাংশ জার্মানই মনে করছেন, খেলোয়াড়দের নতুন করে উজ্জীবিত করতে দলে এখন নতুন রক্ত দরকার। দরকার নতুন দিক-নির্দেশনা! নিজে কোচ না হয়ে সমর্থক হলে, লোও হয়তো দলের এই করুণ অবস্থায় পরিবর্তনের দাবিই তুলতেন!

সেই ২০০৬ সালে নিজেদের মাটির বিশ্বকাপের পর প্রধান কোচের দায়িত্ব পান লো। দায়িত্ব নিয়েই তিনি এক দল তরুণ ফুটবলারকে বাছাই করে ধীরে ধীরে বিশ্বমানের করে তোলেন। তার ফলও জার্মানি পেয়েছে। লোর নেতৃত্বে জিতেছে ২০১৪ বিশ্বকাপ। কিন্তু ২০১৮ সালটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, সেই একই দিক-নির্দেশনা, দর্শন দিয়ে এই দলটাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলাটা লো’র জন্য কঠিন হবে। হয়তো সম্ভবও নয়।

জার্মানরা তাই লোকে ছাটাই করে নতুন কাউকে কোচ করার দাবি তুলেছে। লোর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিশেষ একজন পছন্দও করে ফেলেছে জার্মানরা। লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দেখতে চাইছেন তারা। আলোচনা আছে মাথিয়াস সামারকে নিয়েও। যদিও সাবেক এই তারকার কোচিং অভিজ্ঞতা তেমন নেই।

কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশবাসীর এই চাওয়া মেনে জার্মান ফুটবল ফেডারেশন কি লো’কে ছাটাই করে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেবে? প্রশ্নটা উঠছে, কারণ কদিন আগেই লোর সঙ্গে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করেছে তারা। তবে বোর্ডের সেই চুক্তিটা মেনে নিতে পারছেন না জার্মানির সাধারণ ফুটবল সমর্থকেরা।

দল যেভাবে ব্যর্থতার কানাগলি দিয়ে হাঁটছে এবং যেভাবে ছাটাইয়ের দাবি জোরালো হচ্ছে, তাতে ৫৮ বছর বয়সী লো’র কোচ পদে টিকে থাকার সময় ঘনিয়ে এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। তা বোর্ড যতই চুক্তি নবায়ন করুক। দলের টানা ব্যর্থতায় চাপটা এখন বোর্ড কর্তাদের উপরও।