ভিকারুননিসার অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষক বরখাস্ত

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি। পাশাপাশি বুধবারের স্থগিত হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা শুক্রবার নেয়া হবে এবং রোববার থেকে ক্লাস স্বাভাবিকভাবে চলবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গভর্নিং বডির জরুরি সভায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি সবাইকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী দুই বা তিন দিনের মধ্যে নতুন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে। যোগ্য শিক্ষকদের নামের তালিকা করে গভর্নিং বডির সভায় তোলা হবে। সবার সম্মতিতে নতুন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হবে।’

গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বুধবারের (৫ ডিসেম্বর) স্থগিত বার্ষিক পরীক্ষা শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) এবং বৃহস্পতিবারের (৬ ডিসেম্বর) পরীক্ষা ১১ ডিসেম্বর নেয়া হবে। এ ছাড়া আগামী রোববার থেকে স্কুল-কলেজের ক্লাস স্বাভাবিক হবে। এসব বিষয় সব অভিভাবক-শিক্ষার্থীকে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।’

শিক্ষার্থীরা গভর্নিং বডির পদত্যাগ দাবি করছে- এ বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সব অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ গভর্নিং বডির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টায় এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বসার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়নে আমরা বৈঠকে বসছি। বৈঠক থেকে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।’

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির একটি স্কুলের গভর্নিং বডির সব সদস্যের পদত্যাগ। এ দাবির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বডির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। গভর্নিং বডির পদত্যাগে স্কুল যেন নেতৃত্ব শূন্য না হয় সে বিষয়ে আলোচনা করব।’

অরিত্রির মৃত্যুর দায় কার? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক কেউ দায়মুক্ত নয়।’

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার সচিবালয়ে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই তিনজনকে আমরা বরখান্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গভর্নিং বডিকে নির্দেশ দিচ্ছি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ ও বরখাস্তের কাজটি করে গভর্নিং বডি, আমরা সরাসরি করতে পারি না।’

অপরদিকে এ তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে অরিত্রির আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে ‘প্রমাণিত’ হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র‌্যাব ও পুলিশকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে আজও সড়কে অবস্থান নেয় রাজধানীর ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা।

গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রি অধিকারী।

অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি দেয়ার) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এ অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’