ভুয়া পে-অর্ডারে ট্রাস্ট ব্যাংকের সাড়ে ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ট্রাস্ট ব্যাংক খুলনার দৌলতপুর শাখা থেকে ভুয়া পে-অর্ডারে সাড়ে ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ওই অর্থ তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে তা আদায় না হওয়া এবং ঋণ প্রদানের বিপরীতে কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ব্যাংক থেকে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

ব্যাংক ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর শাখার ছয় কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া পে-অর্ডার দেখিয়ে অভিনব পন্থায় ৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তারা হলেন- দৌলতপুর শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ও সাব ম্যানেজার শেখ তৌহিদুল ইসলাম, একই শাখার এফএভিপি ও ম্যানেজার শারমিন আক্তার সুমি, অপর কর্মকর্তা শারমিন জামান, জুনিয়র অফিসার মো. মেহেদী হাসান, খুলনা শাখার ইভিপি অফিসার ও ম্যানেজার তানভির হোসেন এবং খুলনার শাখার প্রিন্সিপ্যাল অফিসার খাইরুল হাসান মিয়া।

এছাড়া দৌলতপুরের ব্যবসায়ী ও বিএল ট্রেডিং কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী দীপংকর মণ্ডল লিটন এ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা সুকৌশলে জাল টেন্ডার নোটিশ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জাল স্বাক্ষরে ভুয়া পে-অর্ডার বানিয়ে নিজেরাই সেগুলো নগদায়ন করে আত্মসাৎ করেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ১৮টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে পে-অর্ডার সাবমিট করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- আল-আমিন এন্টারপ্রাইজ, এফজিএএম এন্টারপ্রাইজ, রহমানিয়া ট্রেডার্স, সামিন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নওশীন এন্টারপ্রাইজ, মাহদি কনস্ট্রাকশন, তাজ ট্রেডার্স, বিএল ট্রেডিং কর্পোরেশন, আলম কনস্ট্রাকশন, সনি ইন্টারন্যাশনাল, সালাম এন্টারপ্রাইজ, কাজী রাসেল এন্টারপ্রাইজ, এনএসআর এন্টারপ্রাইজ, শেখ বাণিজ্য ভান্ডার, অন্নি এন্টারপ্রাইজ, শেখ কনস্ট্রাকশন, রিয়াদ অ্যান্ড লাবিব কনস্ট্রাকশন।

এসব পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নামে ৫০ লাখ টাকা করে পে-অর্ডার দেয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো ইস্যুকৃত পে-অর্ডারের বিপরীতে কোনো অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেনি।

পে-অর্ডারের বিষয়টি জানতে পেরে গ্রাহকরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তা জানায়। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে টাকা আত্মসাতের ঘটনার সত্যতা পায়। এরপর অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ওই টাকা পরিশোধের বিষয়ে আলটিমেটামও দেয় ব্যাংক। তবে তারা তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।

অভিযুক্তদের মধ্যে দৌলতপুর শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও সাব-ম্যানেজার শেখ তৌহিদুল ইসলাম ওই ৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়ে ব্যাংকে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা দেন।

অর্থ পরিশোধের নির্ধারিত সময় ছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়াও তিনি সুবিধাভোগী ও সুবিধাভোগী নন এরূপ একটি তালিকাও দিয়েছেন অর্থাৎ কাদেরকে সুবিধা দেয়ার জন্য এসব ভুয়া পে-অর্ডার তৈরি করা হয়, তা-ও ওই অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করেন।

তবে ওই সময়ের মধ্যে টাকা দিতে না পারায় চলতি মাসে ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে মামলার প্রধান আসামি শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ প্রদান করা হয়।

ঋণ প্রদানের পরিবর্তে যেসব কাগজপত্র সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল, সেগুলো করা হয়নি। ফলে ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। তিনি আরও বলেন, ওই টাকা যখন আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম, তখন ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পে-অর্ডার তৈরি করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার বাদী দৌলতপুর শাখার বর্তমান ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে অনেক আগে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই শেষে মামলাটি করে।

শাখা ম্যানেজার হিসেবে আমি শুধু মামলার বাদী। এর বাইরে আমি কিছু জানি না। মামলার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি কাজী মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, এ ধরনের মামলা দুদক তদন্ত করে থাকে। আমরা মামলাটি রেকর্ড করে দুদক খুলনা অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারাই এখন তদন্ত করে বাকি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সূত্র : যুগান্তর