ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস, বানভাসী মানুষের কান্নার রোল

তিস্তা ও ধরলা পাড়ে প্রতি মুহুতেই ভেসে উঠছে ভানভাসী মানুষের কান্নার রোল। একটু পর পর উজান থেকে ভেসে আসা বানভাসী মানুষগুলোর কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে পুরো এলাকা।

অনেকেই পাড়ে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ঘর-বাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো নিঃশ্ব হয়ে পড়ছে। শত চেষ্টা করেও কয়েকটি বাধ ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ধরলার পানি বিপদসীমার ১০৮ সে.মি. ও তিস্তার পানি ৬৫ সি.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের বাইপাস ভেঙ্গে গিয়ে বিপুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাটের সাথে সারাদেশের বাস ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে প্রতিদিনই তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বেড়েছে তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে থাকা মানুষের দুর্ভোগ। জেলার ৫ উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে পানিবন্দী অবস্থায়।

তিস্তা ও ধরলার পানি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রবিবার ভোর থেকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সে.মি. এবং ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সকাল থেকে তিস্তা ধরলার ৬৩ চরে বাসিন্দাদের সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং করেছেন বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নিবার্হী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান।

এদিকে সদর উপজেলার মোগলহাট এলাকায় অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইটাপোতা বাধ ও শিবেরকুটি, খাটামারি বাধ ভেঙে গিয়ে ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে গেছে পাটগ্রাম শহর রক্ষা বাধটিও। ৫দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোতে একে একে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ি , রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বসতবাড়ি হারানো ধরলা ও তিস্তাপাড়ের মানুষের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। ঘরবাড়ি সরিয়ে এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছে উচু বাধে। চরম দুরঅবস্থায় পড়েছে ব্যারেজের ভাটিতে থাকা জেলার পাটগ্রাম উপজেলার- দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার- ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, সির্ন্দুনা, সানিয়াজান, কালীগঞ্জ উপজেলার- ভোটমারী, তুষভান্ডার, আদিতমারী উপজেলার- মহিষখোচা, দুর্গাপুর ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর, গোকুন্ডা, খুনিয়াগাছ, বড়বাড়ি, কুলাঘাট ও মোগলহাটসহ ৩০টি ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বানভাসী মানুষগুলো।

ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, যে সব এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে জিও ব্যাগ ও বালু বস্তা ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকেীশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান,ভারত গজলডোবা ব্যারেজের ৫৪টি গেট খুলে দেওয়ায় এবং দেশের অভ্যন্তরে ৫ দিনের ভারি বর্ষর্ণের কারণে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায়, পানির প্রবল স্রোতে ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গিয়ে উজান ও ভাটির ৩৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন বলেছেন, বন্যার কারণে জেলার ১৬৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসার রেজাউল করিম জানিয়েছেন, জেলার ৩ শতাধিক পুকুরে ভেসে গিয়ে নিঃস্ব করেছে কয়েক হাজার মাছ চাষিকে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে। বন্যার কারণে জেলার বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষদের মাঝে ১৬শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।