ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ-আতংক

বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর অল্প সময় বাকি আছে। কিন্তু এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনেক মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাজ করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে মানুষ যেভাবে মতামত প্রকাশ করেছেন তাতে অধিকাংশ মানুষের মাঝে উদ্বেগ এবং আতঙ্ক ভর করেছে বলে বোঝা যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছিল – আপনার এলাকায় নির্বাচন নিয়ে পাবলিক মুড কেমন? মানুষ কি ভোট দিতে আগ্রহী নাকি হতাশ?

বিবিসির ফেসবুকে পাতায় আড়াই হাজারের বেশি মতামত এসেছে যেখানে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের উদ্বেগ এবং আতঙ্কের কথাই তুলে ধরেছেন।

মহিন উদ্দিন সুমন নামে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, তিনি চাঁদপুর ৫ আসনের ভোটার।

তিনি লিখেছেন, ” এখনো সবারই মাঝে ভয় কাজ করছে। কারণ মাঠে শুধু সরকার দল দেখছি আর এখনো প্রেফতারের খবর পাচ্ছি।”

রুহুল আমিন নামে আরেক ব্যক্তি নিজেকে ভোলা ১ আসনের ভোটার হিসেবে পরিচয় দিয়ে অভিযোগ করেছেন, তাঁর এলাকায় সন্ত্রাসী, পুলিশ, বিজিবি এবং র‍্যাব বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।

মি: আমিন লিখেছেন, ” আমার এলাকায় ধম ধমে (থমথমে) পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জানিনা আগামীকাল ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবো কি না।”

লক্ষ্মীপুর ৪ আসন থেকে মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, ” ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত ভোটারগণ।”

কুষ্টিয়া সদর আসন থেকে আকাশ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, সেখানে এক ধরণের চাপা আতংক বিরাজ করছে সবার মাঝে।

কেউ নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে চাইছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি লিখেছেন, ” সবাই চাচ্ছে ভালোই ভালোই ৩০ ডিসেম্বর পার হয়ে যাক। উৎসব মুখর পরিবেশ নেই। সর্বদা চাপা আতংক বিরাজমান।”

তবে শিহাব শাবাব জোসি নামে একজন ভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তিনি নিজেকে ঝালকাঠি ২ আসনের ভোটার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সেখানে পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক এবং দুই দল সমান প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

“তারা একই সাথে মিছিল করতেছে। ভালোই লাগতেছে। সব মিলিয়ে আনন্দ দায়ক পরিবেশ। ইদ ইদ লাগছে,” লিখেছেন মি: জোসি।

তবে সাইফুল ইসলাম মাসুম নামের আরেকজন লিখেছেন, ” আমার ২৪ বছরের জীবনে যেই কয়েকটি বড় নির্বাচন দেখেছি, এইবারের মতো এত আতঙ্ক আর দেখিনি। বিরোধী দলের সব নেতারা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে থাকে। শতকরা ৭০ ভাগ মহিলা এইবার ভোট কেন্দ্রে যাবে না।”

নির্বাচন কমিশন কী বলছে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ ভোটার নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগ-আতংক প্রকাশ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আবারো দাবি করেছেন, নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ” আজকের ডেইলি স্টার পত্রিকায় পড়লাম যে প্রার্থীর এজেন্ট-গনকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। সুনির্দিষ্ট কোন ফৌজদারি অপরাধ না থাকলে পুলিশ কাউকে হয়রানি করবে না। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।”

নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালনের আহবান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাদের কারো জন্য নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।

ভোট গ্রহণের দিন নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।