ভোটারই নন, তবু ডাকসুতে প্রার্থী ছাত্রলীগ নেত্রী নিপু!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার লিস্টে নাম না থাকার পরও ডাকসুর সদস্য প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকায় নাম এসেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর। বিষয়টি নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে।

যদিও হল প্রশাসন দাবি করেছে, ভোটার তালিকায় ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম রয়েছে। অন্যদিকে ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি দেখা হবে। আর এ ব্যাপারে জানার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আলোচিত ওই ছাত্রীর নাম নিপু ইসলাম তন্বী। তিনি ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর সদস্যপদে মনোনীত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্রী। শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রত্ব না থাকার কারণে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধীন সান্ধ্যকালীন কোর্স ‘মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্টে’ ভর্তি হন। কিন্তু হলের সরবরাহকৃত ভোটার তালিকার এখনো তন্বীর নাম আসেনি।

এদিকে, গতকাল বুধবার বিকেলে ডাকসু ও হল সংসদের প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ডাকসুর তালিকায় তন্বীর ভোটার নম্বর আসে ৩৭৩৮। আর হলের নাম আসে শামসুন নাহার। এ ছাড়া ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ছাত্রী বলে দেখানো হয়। কিন্তু হলের ভোটার তালিকায় তাঁর ভোটার নম্বর, নাম এবং বিভাগের কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বস্তুত সেই হলে মোট ভোটারই ৩৭৩৭ জন।

কয়েক দিন আগে কয়েকটি গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেত্রী তন্বীকে নিয়ে ‘ভোটার না তবুও প্রার্থী’ শিরোনামে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে তিনি মনোনয়নপত্র নিতে পারবেন না। অথচ তন্বী হল থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে ডাকসুর সদস্যপদে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন।

এই অভিযোগের বিষয়ে নিপু ইসলাম তন্বীকে সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বারবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ভোটার লিস্টে নাম না থাকলে কীভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন—জানতে চাইলে গত সোমবার নিপু ইসলাম তন্বী বলেছিলেন, ‘আমি ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হয়েছি। আমার নাম সম্পূরক তালিকায় রয়েছে।’ তবে ভোটার নম্বর জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে পারেননি।

ভোটার তালিকায় নাম নেই, তবুও তন্বী কীভাবে প্রার্থী হলেন—জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সুপ্রিয়া সাহা বলেন, ‘আছে, আছে। আপনি খোঁজ নেন।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এর আগে তন্বী কীভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন—জানতে চাইলে গত সোমবার প্রাধ্যক্ষ বলেছিলেন, ‘আমি এই নিয়ম সম্পর্কে অবগত না।’ সে সময় তিনি উল্টো এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, ‘এই নিয়ম আপনি কোথায় পেয়েছেন?’

তবে এ ব্যাপারে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘পাঁচ-ছয়জন মিলে যাচাই করেছে তো, হয়তো ভুল থাকতেই পারে। তবে কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি দেখা যাবে।’

‘প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে যদি কেউ ভুল করে থাকে’, তবে এ বিষয়ে কী বলবেন—জানতে চাইলে ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সব বলা যায় না। বললাম তো, কেউ অভিযোগ করলে দেখব।’

এর আগে গত সোমবার তন্বীর ভোটার তালিকায় নাম না থাকার পরেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার বিষয়ে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘যাদের ভোটার তালিকায় নাম নেই, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। মনোনয়ন নিতেও পারবেন না তিনি। যদি পরে সম্পূরক তালিকায় নাম থাকে, তবে তিনি শুধু ভোট দিতে পারবেন। তন্বীর মনোনয়নপত্র নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

ডাকসু নির্বাচন কমিশন আগামী ৫ মার্চ সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। আর সম্পূরক ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম আসবে, তাঁরা প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন গ্রহণের শেষ তারিখ ছিল। কর্তৃপক্ষ ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন গ্রহণকারীদের থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও গত সোমবার বলেছিলেন, ভোটার না হলে তিনি তো ফরম নিতে পারবেন না। তবে তন্বীর বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানিয়েছিলেন।-এনটিভি অনলাইনের সৌজন্যে।