ভোটের আগে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে তোড়জোড়

ভোটের আগে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের তোড়জোড় চলছে। অনুমোদন দেয়া হচ্ছে একের পর এক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। সম্প্রতি যেসব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, তার অধিকাংশই গ্রামীণ অবকাঠামো সংক্রান্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার কারণ রয়েছে। এর সঙ্গে ভোটার তুষ্টির একটা সম্পর্ক রয়েছে। এখন প্রকল্প অনুমোদন দিলে হয়তো কাজ শেষ করা যাবে না। কিন্তু মানুষের মধ্যে একটা উন্নয়ন প্রচার সংক্রান্ত বলার মতো কিছু পাওয়া যাবে। তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি সব প্রক্রিয়া মেনেই উন্নয়ন প্রকল্প পাস হচ্ছে। সবধরনের প্রকল্পই নেয়া হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভা। সভায় উঠছে তিন হাজার ৬৬৭ কোটি টাকার ‘রুরাল কানেক্টিভিটি ইম্প্রভমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্প। এ ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে দেয়া হচ্ছে এক হাজার ১৭২ কোটি টাকা। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে দুই হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।

এই অর্থ দিয়ে দেশের ৪৩টি জেলার ১৮০টি উপজেলার সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে উপজেলা সড়কের উন্নয়ন হবে দুই হাজার ২১০ কিলোমিটার, ইউনিয়নে ৪৯৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন হবে। অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর এটির বাস্তবায়ন করবে।

সভায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্প উঠছে। এর মধ্যে রয়েছে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়ক (আর-১৬০) উন্নয়ন (চট্টগ্রাম অংশ) শীর্ষক প্রকল্প, ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট-স্থলবন্দর-ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমার নদীর উপর সোনাহাট সেতু প্রকল্প। সব মিলিয়ে বিভিন্ন সেক্টরের ১৪টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নির্বাচন কোনো বিষয় না। সারা বছরই দেশের উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দেশের উন্নয়নে এই সরকার ব্যাপক কাজ করেছে। যত উন্নয়ন আমাদের এই ১০ বছরে হয়েছে, বিগত কোনো সময়েই এত উন্নয়ন হয়নি।

তিনি বলেন, গ্রামীণ সড়কসহ দেশের অন্যান্য সড়ক এর আগেও উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এসব সড়ক বারবার ভেঙে যায়, ফলে এগুলোর সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে জেলা-উপজেলার কিছু সড়কের সার্বিক উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কের (এন-১০৬) হাটহাজারী হতে রাউজান পর্যন্ত সড়কাংশ ৪-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

তার আগের একনেক সভায় মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আটটি প্রকল্প পল্লী উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট। এসব প্রকল্পে ব্যয় হবে আট হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। সরকারের শেষ সময়ে এসে প্রকল্প অনুমোদনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। উন্নয়ন শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামেও করতে হবে। এটা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি অন্যতম লক্ষ্য। প্রায় সব একনেকেই শহর ও গ্রামীণ উন্নয়নের একাধিক প্রকল্প থাকে। এটা ভালো।-সৌজন্যে : জাগোনিউজ।