মওদুদের প্রশ্নে উত্তেজিত ফখরুলের পদত্যাগের হুমকি

নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দলের অবস্থান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের না জানানোয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এরই একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের মহাসচিব পদ ছাড়ার হুমকি দেন মির্জা ফখরুল। তখন অন্য সদস্যদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

গত শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। রোববার (১৬ জুন) একটি জাতীয় দৈনিকে এসব তথ্য জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বৈঠকে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি। মহাসচিব কেন পদত্যাগ করতে চাইবেন?

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে ভেঙে দেওয়া কমিটির নেতাদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তা নিয়ে শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি আরও জানান, সভায় নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে সব সদস্য একমত হন।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাদের আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ক্ষোভ প্রতিবাদ জানানোর অধিকার তাদের রয়েছে। নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয় সব সদস্যের একমত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনীয়। জানানো যাবে না। তবে গত শনিবারের বৈঠকে সব বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। পরে আবারও বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য আরও বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দূরত্ব তৈরি হয় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই। সে সময় নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা, পরিবেশ আদায়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করতে মওদুদ আহমদ ফোন করেছিলেন মির্জা ফখরুলকে। কিন্তু মির্জা ফখরুল ফোন ধরেননি। পরেও যোগাযোগ করেননি। এতে ক্ষুব্ধ হন মওদুদ আহমদ।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পর দলের সিদ্ধান্ত ছিল শপথ না নেওয়ার। কিন্তু হঠাৎ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। কোন প্রেক্ষাপটে, কী কারণে দলের সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেন, তা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের না জানানোয় ক্ষুব্ধ হন মওদুদ আহমদ। পরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে মওদুদ আহমদ বলেন, কোন কারণে আমরা সংসদে গেলাম তা স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে সব নেতাকে জানানো উচিত দলের মহাসচিবের। তবে এরপর গত শনিবারের আগে আর স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি।

শনিবার বৈঠকের শুরুতেই মওদুদ আহমদ দলের মহাসচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, সংসদে যোগ দেওয়াসহ নানা ইস্যুতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেন অন্ধকারে রাখা হচ্ছে? কেন সবাইকে বিষয়গুলো জানানো হচ্ছে না? এর একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে মির্জা ফখরুল পদত্যাগ করতে চাইলে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা তাকে শান্ত করেন। বৈঠকে স্কাইপের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকা তারেক রহমানও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।