‘মনে হতো, আমি একজন যৌনদাসী’

ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থী নারীদের অনেকে যৌন হয়রানির শিকার হলেও তা প্রকাশ করেন না। তারা ভয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেন না।

এই নারীরা মনে করেন, যেহেতু তারা ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থী, ফলে তারা পুলিশের সাহায্য চাইলে বা তাদের হয়রানির ঘটনা প্রকাশ করলে তাদেরকেই ব্রিটেন থেকে বের করে দেয়া হতে পারে।

তবে, এ ভয় থেকে এখন অনেকে বেরিয়ে আসছেন। অনেকে মুখ খুলছেন।

৩৭ বছর বয়স্ক গ্রেস বেশ কয়েকবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি জানান, ব্রিটেনে তার মতো বহু আশ্রয়প্রার্থী নারী প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হন। এ কারণে তারা চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

তিনি যে আশ্রয়প্রার্থী, এই সুযোগ নিয়ে অনেকে প্রতারণা করেও যৌন হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ তার।

গ্রেস ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে এসেছেন ১৯৯৮ সালে। সেই থেকে দুই দশক লন্ডনে তার আশ্রয়প্রার্থীর জীবন সুখের নয়।

তার জন্ম পশ্চিম আফ্রিকায় এক দরিদ্র পরিবারে। কিন্তু আত্নীয় স্বজনের নির্যাতনের কারণে দেশ ছেড়ে লন্ডনে আসেন।

গ্রেস এর পরিবার এতটাই দরিদ্র ছিল যে, তাকে পনেরো বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিল।

গ্রেস ও তার বড় বোনকে একই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই ব্যক্তির বয়স গ্রেসের বাবার বয়সের চাইতেও বেশি।

বিয়ের পর দুই বোনকে তাদের বৃদ্ধ স্বামী যখন তার বাড়িতে নিয়ে গেলো, তখন তারা দেখলেন, লোকটির আরও পাঁচজন স্ত্রী আছে।

তবে ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের দুই বোন প্রথমবারের মতো একটা চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলেন। সেটা হলো, একবেলা খাওয়ার পর পরের বেলার খাবারের জন্য চিন্তা করতে হতো না।

দুই বোনই বৃদ্ধ স্বামীর কাছে দিনের পর দিন যৌন হয়রানি শিকার হতে লাগলেন।

সেই ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে বেশ ক্ষমতাধর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন অবস্থান নেয়াও কঠিন ছিল। লন্ডনে আশ্রয়প্রার্থী নারীদের অনেকে এখন যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলছেন
তারা লন্ডনে কিভাবে এলেন?

বিয়ের দু’বছর পর গ্রেসের চাচা সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি দুই বোনকে পালিয়ে পর্যটক ভিসায় লন্ডনে পাঠিয়ে দেন।

তার সেই চাচার এক বন্ধু লন্ডনে হিথরো বিমানবন্দর থেকে তাদের স্বাগত জানান এবং দুই বোনকে একটি গীর্জায় নিয়ে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসা কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

তারা দুই বোনই লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী একটি পরিবারের সঙ্গে উঠেছিলেন।

লন্ডনে কিভাবে প্রথম যৌন হয়রানি শিকার হন গ্রেস?

গ্রেস তার বোনকে নিয়ে লন্ডনে যে পরিবারটির বাড়িতে উঠেছিলেন। সেই বাড়িতে ড্রয়িংরুমে গ্রেসকে থাকতে হতো।

কয়েকদিন এভাবে থাকার পর গ্রেস ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। যখন সবাই ঘুমিয়ে যায়, তখন গভির রাতে বাড়ির কর্তা উপর তলা থেকে নেমে আসেন ড্রয়িংরুমে।

তিনি গ্রেসকে যৌন নির্যাতন শুরু করেন। বাড়ি থেকে বের করে দিলে গ্রেস কোথায় যাবেন, সেই ভয়ে গ্রেস তা প্রকাশ করতে পারেননি।

বিশ বছরে লন্ডনে তিনি আরও অনেক বাড়িতে থেকেছেন এবং প্রায় সব জায়গাতেই তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

তার মতোই লন্ডনে অনেক আশ্রয়প্রার্থী নারীর এমন অনেক গল্প আছে, যা এখন অনেকেই প্রকাশ করছেন। বিবিসি বাংলা।