মন ভালো রাখতে জেনে নিন

দেহের সুস্থতা থেকে মনের সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। কারণ আমাদের মনই যে কোনো ব্যাপারে প্রথমে সাড়া দেয়। আর তাই শুধু শারীরিক সুস্থতা ও কায়িক পরিশ্রম দিয়েই একজন মানুষ সব সময় ভালো থাকতে পারে না। মন ভালো রাখার কিছু উপায় জেনে নিন-

ক্ষমা : ধরুন আপনার সঙ্গে একজনের খারাপ সম্পর্ক আছে। আপনার মনের মধ্যে তার ছবি কল্পনা করে এবং আপনার উচ্চ সত্তা থেকে ভালোবাসার শক্তি নামিয়ে এনে বার বার বলুন, তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। একপর্যায়ে আপনি মনে মনে চিন্তা করতে থাকুন যে এ সমস্যাটা ঠিক হয়ে গেছে এবং আপনি লোকটিকে ক্ষমা করতে পেরেছেন।

দ্বিতীয়বার যখন আপনি এটি করতে যাবেন দেখবেন আপনার মধ্যে লোকটির প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা এসেছে। আর যদি ভালোবাসা নাও আসে তবে আবার আপনি একইভাবে এটি করতে থাকুন। একসময় দেখবেন সত্যিই আপনি তাকে ক্ষমা করতে পেরেছেন। যে কোনো বিষয়ে আপনি এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

স্থির হওয়ার ব্যায়াম : একটি চেয়ারে বসুন এবং পা দুটি মেঝেতে রাখুন।

চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে চিন্তা করুন যেন আপনার মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে, যোগের ভাষায় যাকে কু-লী বলে, সেখানে একটি বৈদ্যুতিক তার লাগানো রয়েছে। এ তার আপনার মাথার ওপরের শান্ত সাগরের মতো পৃথিবীর ঠিক মাঝখান থেকে ঝরনাধারার মতো নেমে এসেছে। এটি আপনার দেহে ঢুকে সব বর্জ্য পদার্থ ও খারাপ কিছু চুষে নিচ্ছে। আপনি নিজেকে খুব হালকা বোধ করছেন। প্রথম প্রথম এটি করতে শান্ত জায়গার প্রয়োজন হবে। পরে, আপনি এটি আয়ত্ত করতে পারলে যে কোনো স্থানে বা জায়গায় যেমন অফিসে, রাস্তায়, লোকালয়ে করতে পারবেন। মন শান্ত রাখার জন্য এটি একটি মহৌষধ। এর উপকারিতা আপনি প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারবেন।
শান্ত থাকার যোগ : আমরা বেশির ভাগ সময় আমাদের নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। সব সময় আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করে- ‘আমার কী হবে? আমি এটি পাব কি পাব না? এটি পেতে আমার কী করা উচিত বা অনুচিত?’ কিন্তু এটা না করে স্থির থাকুন। নিজেকে আট বছরের বালক বা বালিকা ভাবুন। নিজের দোষ-গুণ সম্পর্কে নিজেকে নিরপেক্ষ কিন্তু নরমভাবে প্রশ্ন করুন। নীরবতাকে মনের মধ্যে আহ্বান করুন এবং বলতে থাকুন- ‘নীরবতা এসো’, ‘শান্ত হও’। একটু পরেই দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে। যখনই অশান্ত হয়ে পড়বেন তখনই এটি করতে থাকবেন।

তিন চক্রকে সক্রিয় রাখা : বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র ও মণিপুর চক্রের মধ্যে দিব্য আলো, আনন্দ, চেতনা খেলা করতে থাকে। তাই এ চক্রগুলো সক্রিয় রাখা খুব জরুরি। কণ্ঠ, হৃদয় ও প্লিহার ওপরে চাপড়াতে থাকুন। এতে এ চক্রগুলো সক্রিয় হবে। দিনে দুই মিনিট করে আপনি এটি করতে থাকুন।

স্নায়ু উত্তেজক ব্যায়াম : জড়তা কোনো ভালো বিষয় নয়। একে যোগের ভাষায় ‘তামসিক ভাব’ বলা হয়ে থাকে। স্নায়ু উত্তেজিত ও জড়তা দূর করতে আপনি বিভিন্ন যোগব্যায়াম করতে পারেন। যেমন আপনার এক হাতের তালুর একটু ওপরে অন্য হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন। আস্তে আস্তে আঙ্গুলগুলো বুড়ো আঙ্গুলের দিকে নামিয়ে আনুন। পনের বার এটা করুন। এতে আপনার জড়তা দূর হবে।

কুকুর অথবা বিড়াল পোষা : বেশির ভাগ মানুষ স্বার্থপর হয়ে থাকে। আবার অনেকের মধ্যে পশুবৃত্তি আছে। প্রাণীদের আচার-আচরণ সংক্রামক। কুকুর প্রভুভক্ত। এদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, শিশুসুলভ আচরণ, খেলাপ্রিয়তা ও অল্পে তুষ্ট থাকার প্রবণতা আপনার মধ্যেও সংক্রামক রোগের মতো প্রবাহিত হয়ে থাকে। তাই স্বার্থপর মানুষকে সঙ্গ না দিয়ে প্রাণীদের সঙ্গ দেওয়া অনেক ভালো।

সাগরের পানিতে সাঁতার : আমাদের সম্পূর্ণ দেহের ওপর একটি বলয় আছে যাকে ‘সূক্ষ্ম দেহ’ বলে। এ সূক্ষ্ম দেহ অলৌকিক আভা দিয়ে তৈরি, যা আমাদের দৈহিক ও আত্দিক সুস্থতা প্রকাশ করে থাকে। আমাদের দেহকে এ অলৌকিক আভা প্রকাশের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর তাই প্রতিদিন ভোরে সাগরের পানিতে স্নান করতে হবে। কারণ লবণাক্ত পানিকে প্রাকৃতিক পরিষ্কারক বলা হয়। দেহের অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে ও দেহে মিনারেলের সমতা আনতে লবণের গুরুত্ব অপরিসীম। দেহ পরিষ্কার না থাকলে রোগ দেহে বাসা বাঁধবে এবং জীবনটাকে বোঝা ও বিরক্তিকর মনে হবে।

রংতুলি ব্যবহার : শিশু মানেই নিষ্পাপ ও পবিত্র কিছু। শিশুদের মতো রংপেনসিল নিয়ে অাঁকতে শুরু করুন। চোখ বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করে মন শান্ত করুন। এরপর আপনার মস্তিষ্ক সচল করার জন্য কাগজের ওপর একটি বৃত্ত অাঁকুন এবং একে আট ভাগে ভাগ করুন। এ আট ভাগে আপনার ইচ্ছামতো রং দিয়ে বৃত্তটি পূরণ করুন। ছবি অাঁকার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানুন বা না জানুন এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না।

গাছ লাগানো:
গাছ লাগানো খুব ভালো একটা অভ্যাস। বাগান করা মনের খোরাক জোগায়। গাছ লাগানো ও পরিচর্যা আপনাকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাবে, প্রকৃতিপ্রেমিক করে তুলবে, প্রকৃতির মতো উদার হতে সাহায্য করবে। বাড়িতে করা বাগান থেকে আপনি সতেজ বাতাস পাবেন। তা ছাড়া আপনি রান্নার জন্য তাজা সবজি পাবেন।

এ ছাড়াও মনোবিজ্ঞানীরা সবাইকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসার পরামর্শ দিয়েছেন। আরও কিছু উপায়ে হয়তো আপনি আনন্দে থাকতে পারেন। যেমন শত ব্যস্ততার মাঝেও অন্তত সপ্তাহের একটি দিন বা একটি ঘণ্টা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান। তাদের নিয়ে বেড়াতে যান কোনো পছন্দের জায়গায়।