মশলার দাম দ্বিগুন: সরকারের পাঁচ সংস্থার বাজার তদারকি ব্যর্থ

ঈদুল আজহা ঘিরে মসলার বাজার তদারকিতে ব্যর্থ সরকারের পাঁচ সংস্থা। সংস্থাগুলো হচ্ছে- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং সেল, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন ও র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জানা গেছে, এ সংস্থাগুলোর কাজ ছিল ঈদ ঘিরে মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম সহনীয় রাখা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, পাইকারি বাজারে গত এক মাসে এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, আদা, রসুনসহ মসলা জাতীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। আর খুচরা বাজারে এসব পণ্যের লাগাম ছাড়িয়েছে দাম।

গত মাসে বাজার তদারকি নিয়ে কথা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তখন তিনি বলেন, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে। কোথাও অসঙ্গতি দেখলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সে সময় তিনি আরও বলেন, এরপরও ঈদ ঘিরে বিশেষভাবে মনিটরিং করা হবে। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। ভোক্তার স্বার্থে মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। দাম বাড়তে দেয়া যাবে না।

কিন্তু বাজারে বাস্তবতা ভিন্ন। গত এক থেকে দেড় মাসে মসলাসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বৃহস্পতিবার মসলার বৃহত্তম পাইকারি বাজার রাজধানীর মৌলভীবাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ২০০ টাকা বেড়ে এলাচ বিক্রি হয়েছে ২২০০-২৬০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০০০-২৪০০ টাকা। এক মাস আগে বিক্রি হয় ১৪০০-১৬০০ টাকা। লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে ৭৬০-৮০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ছিল ৭০০-৭৬০ টাকা। আর এক মাস আগে দাম ছিল ৪৬০-৬০০ টাকা। দারুচিনি সপ্তাহের ব্যবধানে ৯৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩৯৫ টাকা কেজি। জিরা বিক্রি হয়েছে ৩৭০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০ টাকা। এক মাস আগের দাম ৩২০ টাকা।

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাচ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ২৫০০-৩০০০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০০-২৮০০ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৮৫০-২১০০ টাকা। লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে ১০০০-১২০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৯৫০-১১০০ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৮০০-১০০০ টাকা। জিরা বিক্রি হয়েছে ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮০-৪২০ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪০-৩৯০ টাকা। দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৩০-৪৮০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে আদা বিক্রি করতে দেখা গেছে মানভেদে ১৫০-২০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০-১৮০ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৩০-১৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২৫-১৫০ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা। এছাড়া আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৭৫ টাকা। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা। নয়াবাজারের খুচরা মসলা বিক্রেতা মো. সালাউদ্দিন বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়েছে। এর কারণে খুচরা বাজারে দাম বেশি।

মৌলভীবাজারের পাইকারি বিক্রেতা জামিল বলেন, আমদানিকারকরা মসলার দাম বাড়িয়েছে। তারা বলছে বিশ্ব বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। অথচ বাজারে যে মসলা আছে তা আগের আনা। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, বাজারে মসলার দাম বেশি। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. লিয়াকত আলী বলেন, বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বেশি। কেউ যেন দেখার নেই।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, অসাধুদের আইনের আওতায় এনে দাম সহনীয় করা হবে। সূত্র : যুগান্তর