মাঠ পারফরমেন্সে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলের মাঠ পারফরমেন্সে নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এ দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে চান না বর্তমান সংসদ সদস্যরাও। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহীরা জনগণের মন জয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় দলীয় প্রধানের হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পর এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ওই সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে। জনপ্রিয়তা না থাকলে মনোনয়ন নয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতির এমন ঘোষণার পর অনেকটা আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। গত ২৭ মে নিজ নির্বাচনী এলাকায় বাঁধ দিতে শ্রমিকদের সঙ্গে মাটি কাটায় যোগ দেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার। লুঙ্গি পরে শ্রমিকদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাটি কেটে নদীর পাড় বাঁধতে দেখা গেছে তাকে। কাজের বিরতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে আম আর কাঁচামরিচ দিয়ে পান্তা খেতেও দেখা গেছে এ সংসদ সদস্যকে।

একই দিন নিজ নির্বাচনী এলাকার অবহেলিত খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিয়ে সময় পার করতে দেখা গেছে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হককে। সাধারণ মানুষের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অসুস্থ মানুষেরও খোঁজ-খবর নেন সাবেক এ মন্ত্রী।

গত ১ মে নিজ নির্বাচনী এলাকা নাটোরের সিংড়ায় রিকশাচালককে যাত্রীর আসনে বসিয়ে রিকশা চালান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

নেত্রকোনা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহি। তিনি বর্তমানে নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। পাশাপাশি গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন।

নেত্রকোনা-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হাওর সফরকালে সাবেক এ ছাত্রনেতাকে তৎপর থাকতে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, ২০০৬ সালে এ আসন থেকে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্ত পরবর্তীতে সে নির্বাচন হয়নি। এবারও আমি এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইব।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে শতাধিক আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে এ ধরনের গণমুখী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই, দলীয় মনোনয়ন পাওয়া। কেউই এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে চান না।

দলটির বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন সংক্রান্ত ঘোষণার পর গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা এখন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতা জানান, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়ে ছিটকে পড়তে পারেন। কারণ তারা নানা বিতর্কে বারবার সমালোচিত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ। সম্প্রতি এমন ইঙ্গিত মিলেছে কক্সবাজার সফরকালে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে।

গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং থেকে শাহপরীর দ্বীপের মাঝামাঝি সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেতুমন্ত্রী। বদির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমাকে আগামীতে আর মনোনয়ন দেব না।’

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে যারা বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন, সেসব এলাকায় নতুনদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বর্তমান কমিটির প্রায় ডজন খানেক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাহী সদস্য মনোনয়ন পেতে নির্বাচনী এলাকায় সময় দিচ্ছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূ্ত্রে জানা গেছে।