‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাকে জন্মদিনের একটা উপহার দেবেন প্লিজ?’

জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভাইকে ফিরিয়ে দেয়ার আবদার করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ শিক্ষক এবং গবেষক মোবাশ্বের হাসান সিজারের বোন তামান্না তাসমিন।

১৮ নভেম্বর সিজারের বোন তামান্নার জন্মদিন। এদিকে বড় ভাইয়ের খোঁজ নেই ১২ দিন হলো। অন্য বছরগুলোর মতো এবারের জন্মদিন তাই আর আনন্দ বয়ে আনেনি তামান্না বা তার পরিবারের জীবনে। সেই বর্ণনা দিয়ে আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিজারকে খুঁজে ফিরিয়ে দেয়ার প্রবল আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে ছবিসহ এক দীর্ঘ আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

পোস্ট করা ছবিটি তামান্নার তোলা একটি সেলফি। সেখানে সিজারকে দেখা যায় মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। সবার মুখেই হাসি। ছবির সঙ্গে স্ট্যাটাসে তামান্না লিখেছেন:

‘আজ আমার জন্মদিন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি আমাকে জন্মদিনের একটা উপহার দেবেন প্লিজ?

১৬ কোটি জনতার অভিভাবক আপনি। আপনার দিকে অনেকগুলা মুখ তাকিয়ে আছে। সেই ভিড়ে আমি অতি নগন্য একটা মানুষ। তাও আমি এই সাহসটা করতে চাই।

কারণ আপনার কাছ থেকেই সেই সাহসটা আমি পেয়েছি।

আমি দেখেছি কিভাবে আপনি ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমার মনে আছে আপনার সেই কথা যখন আপনি বলেছিলেন ‘আমরা যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, আমরা আরো ১০ লক্ষ মুখকেও খাওয়াতে পারবো।’

আমি ভুলিনি পুরান ঢাকার সেই তিন মেয়েকে যাদেরকে আপনি গণভবনে বিয়ে দিয়েছেন আপনার নিজের মেয়ের মর্যাদায়।

আমি দেখেছি বিপর্যস্ত মানুষের কষ্টে কিভাবে আপনি অঝোরে কেঁদেছেন।

আমার মনে হয়েছে সেই দেশনেত্রীর কাছে তো আমি আবদার করতেই পারি!

বিভিন্ন সময়ে শোকার্তদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে আপনি বলেছেন ‘স্বজন হারানোর ব্যথা আমি বুঝি’……………. তাই আমি আপনার কাছেই এই আবদার করতে চাই।

আমাকে কি আমার একমাত্র ভাইয়াকে ওর চিরাচরিত সেই হাস্যোজ্বল অবস্থায় ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবেন প্লিজ?

আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হবে সেটা।

জানেন, আমার এখনো বিশ্বাস হয় না ও ১২টা দিন ধরে আমাদের সাথে নাই। আমার খালি মনে হয় এইতো নাদুস নুদুস শরীরটা নিয়ে এসে হাক দেবে একটা ‘তামান্নাআআআ………….’। আমার এখনো মনে হয় আমি অনেক দীর্ঘ কোনো দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আজ ১২ দিনেও যে দুঃস্বপ্নের ইতি হয়নি। আমার প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয় সকালেই ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখবো ফ্যান ছেড়ে লেপ মুড়ি দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

ওর ঘরের কোনো কিছু হারালে ও সবার আগে আমার কাছে খুঁজতে আসে। ভাবটা এমন যেন আমি ওর সব জিনিস নিয়ে যাই। বিশ্বাস করেন ওর ঘরের কোনো কিছুতে আমি হাত দেই নাই ৭ তারিখ থেকে। শুধু দেখে রেখেছি যে সব ঠিকঠাক আছে। নইলে ও ফিরে এসে তো আবার আমার সাথে ঝগড়া করবে!

ছোটবেলা থেকেই আমি চুপচাপ ধরণের আর ভাইয়া দুষ্টুমি করে পাড়া মাথায় তোলা ছেলে। ভাইয়ার চিৎকার ছাড়া বাসাটা এখন মরুভূমির মতো নিস্তব্ধ। আমি সব সময় একটু হতাশাবাদী। আমাকে অনেক বকা দিত ও এই জন্যে। আজ আমি ওর বিছানায় গিয়ে বসে থাকি আর ভাবি ‘ও চলে আসবে’ ………………. আপনি আমার এই আশাটা বাস্তবায়ন করে দেবেন প্লিজ? তাহলে ওকে আমি দেখাতে পারবো যে জীবনে প্রথমবারের মতো আমিও ওর মতো আশাবাদী হতে পেরেছি। আমার মতো ক্ষুদ্র একটা মানুষের এই আকুতি যদি আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছায়, একটু কি দেখবেন প্লিজ? আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আপনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করলে ওকে খুঁজে পেতে সময় লাগবে না।

আমার জন্মদিনের সবচেয়ে বড় হাত সাফাইটা ওর কাছ থেকেই করতাম। আমার যেহেতু গ্যাজেট পছন্দ তাই সেটা চেয়েই হাত সাফাইটা করতাম। আর দেশে থাকলে আমার জন্মদিনে ও বেশ হৈচৈ করে। একটু পর পর বলে ‘আরে, তোমার জন্মদিন নাকি আজকে!’ বাবুকে নিয়ে আসে। আমরা সবাই বাবুর সাথে আবার ছোট্ট বাচ্চা হয়ে যাই।কিন্তু এবার তার বদলে আমাকে শুনতে হচ্ছে আব্বুর দীর্ঘশ্বাস, আম্মুর কান্না। আমি কিভাবে মেনে নিবো যে আমার জন্মদিনে আমার ভাইয়াটা নাই ……….??

ভাইয়ের জন্যে বোনের হাহাকার কেমন হতে পারে তা আমি বিভিন্ন মিডিয়াতে আপনার কান্না দেখে প্রথম বুঝেছিলাম। আজ সেটা নিজে উপলব্ধি করছি। আর তাই আপনার কাছেই আকুতি করছি। এবার আপনি যদি ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন, এবারও ওর কাছ থেকে বরাবরের মতো সবচেয়ে দামি উপহারই আদায় করবো আমি। আমার জীবনের কসম দিয়ে ওকে বলবো ও ঘরে বসে থাকবে আমাদের কাছে। ওকে কোথাও যেতে দেবো না।

আমি শুধু চাই আমার পরিবারটা আবার সম্পূর্ণ হোক। শুধু চাই এই দুঃস্বপ্নের প্রহর কেটে যাক!মোবাশ্বের হাসান সিজার-প্রধানমন্ত্রী

দেবেন আমাকে এই উপহারটা? দেবেন আমাকে আমার ভাইয়াটাকে ফিরিয়ে? আমার একটা মাত্র ভাইয়া …………

প্লিজ ………’

গত ৭ নভেম্বর বিকেলে কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বনশ্রীর বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার পর থেকেই মোবাশ্বের হাসান সিজার ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। ওইদিন সকাল ৭টায় কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিনি। সেদিন সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে তার মুঠোফোনটি বন্ধ রয়েছে।