মানবিক চেতনার কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ্ : আবদুল হাই ইদ্রিছী

সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে মানুষই তার আপন বৈশিষ্ট্যে অনন্য। বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতা মানুষকে দিয়েছে সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। বিবেকবান মানুষ তাই সৃষ্টির আদিলগ্ন হতে মনন ও মেধার কর্ষণে সচেষ্ট। তেমনি অন্তরের আলোকে উদ্ভাসিত এক বিমগ্ন পথিক কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ। ২৫ অক্টেবর কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর জন্ম।

১৯৫২ সালের এই দিনে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিণে সুদৃশ্য নদীচর শস্য-সবুজ গ্রাম পাতাবুনিয়ার গোলেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সুখ্যাত সুফী কামেল ব্যক্তিত্ব মাওলানা মুহাম্মদ আলী (রহ.) ও অত্যন্ত পরহেজগার ব্যক্তিত্ব বিদুষী মরহুমা ছবুরা খাতুন। কবি মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহর শিক্ষা জীবন শুরু বরিশালের জাংগালিয়া থেকে। এরপর শায়েস্তাবাদ, আলীমাবাদ ও আহসানাবাদ চরমোনাই মাদরাসায় পড়ালেখা করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ১৯৮১ সালে লিবিয়ান সরকারের আমন্ত্রনে উচ্চ শিক্ষার্থে সে দেশে চলে যান। সেখানে তিনি লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফীর সাথেও সৌজন্য সাক্ষতে মিলিত হন। এভাবে বেশ কয়েকটি দেশে শিক্ষা ও শুভেচ্ছা সফর শেষে দেশে ফিরে তিনি ঢাকা উত্তরায় Scholet’s brig international English school শিক্ষকতা শুরু করেন।

মার্জিত ও আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন এবং সর্বদা চিন্তাক্লিষ্ট কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ ১৯৭৬ সালে কুমিল্লার হাজীগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘শাপলা’ সাহিত্য সাময়িকীতে ‘ঈদ তুমি কান্না’ নামক কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে লিখে চলছেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। বিচরণ করছেন সাহিত্যের সব শাখায়। সাহিত্যের পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও রয়েছে তার স্বাক্ষর। ১৯৭৭ সালে দৈনিক সংগ্রামের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে জাতীয় দৈনিক এশিয়া বাণীসহ কয়েকটি পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সাথে। উদার মানসিকতায় অভ্যস্ত কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর জীবন গড়ে উঠেছে চরিত্রের সরলতা, উদারতা ও সহনশীলতাকে কেন্দ্র করে। তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অন্তরে বাইরে সরলতা। সরল বিশ্বাসে জীবনযাপনেই তিনি পরিতৃপ্ত। কথার মারপ্যাঁচ ও চালাকি ফটকাবাজি তিনি জানেন না। এখানে আর দশজন থেকে তিনি আলাদা।

কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর জীবন ও সাহিত্যের মাঝে কোনো বিভাজন নেই। মানুষের অন্তরের পশুত্বকে দূর করে সুন্দরের প্রতিষ্ঠাই তার সাহিত্য সাধনার লক্ষ্য। তিনি লিখেছেন-

দীক্ষা আর প্রেরণায় ভরা পৃথিবী মাঝ
যে ভিখারী ভিক্ষা দিলেন আমাকে আজ।
তাকে দেখেছি আজ সুজ্ঞানে সুনছিবে রাজ
চিরদিন তার মাথায় থাক সম্মানের তাজ।
                          -(দোয়া আমার অফুরান)

বিশ্বব্যাপী মানুষ্যত্বের অপমৃত্যুতে কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর অমিল অন্তরের হাহাকারগুলো ফুটে উঠেছে তার বিভিন্ন লেখায়। তিনি লিখেছেন-

অশান্ত জ্বীন গগনে-প্রশান্তহীন ভুবনে
অনন্ত কান্না তাই গোপনে চেপে রাখি যতনে
স্বর্গীয় সুখের সেই বিশুদ্ধ ভালোবাসা।
পাওয়া যাবে কোন খানে?
                     -(ভালোবাসা নেই)

ব্যক্তিত্বের উৎকর্ষতা প্রায় আড়ালেই পড়ে থাকে তার বিণীত সুমার্জিত ও ব্যক্তি জীবনে কষ্ট সহিষ্ণুতা। তার বাইরে ও ভেতরে সরল বিশ্বাসে বড়রা তাকে স্নেহ করে ছোটরা জানায় শ্রদ্ধা। কারো অমঙ্গল ও অকল্যাণ কামনা করার অসুয়াবিদ্বেষ তার মাঝে নেই। এ কারণেই তিনি সবার আপনজন। কাছের মানুষ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘এ দৈন্য মাঝারে কবি/একবার নিয়ে এসো স্বর্গ হতে বিশ্বাসের ছবি।’ কবি মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহর লেখনীতে পাওয়া যায় সেই স্বর্গীয় বিশ্বাসের মানবিক প্রতিচ্ছবি। লেখনীতে তাই কবির বঞ্চিত অনুপম দৃষ্টি নন্দনের বাস্তবায়ন বিশ্বমানব জীবনে প্রতিফলিত হোক সেই প্রত্যাশা রেখে আজ তাঁর ৬৬তম জন্মদিনে কবিকে আন্তরিক অভিনন্দন।