মামলা, সংলাপ ও সফর করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

ভোটে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের অনিয়ম তুলে ধরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের, জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পর্যায়ক্রমে সফর। এজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেট সফরে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যাতে তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।

নিজেদের কর্মসূচি নির্ধারণে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওই বৈঠক শেষে এসব কথা জানান জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতি পড়ে শোনান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, জনগণের জন্য জনগণের শাসন; অর্থাৎ জনগণ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া পদ্ধতি। সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ক্ষমতা ও দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।

কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশের মালিক জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অপব্যবহার করে এবং সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকাকে নিষ্ক্রিয় করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নীল নকশা অনুযায়ী ভোটের পূর্ব রাতে নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে, সরকারি সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যালট পেপারে নৌকা ও লাঙল মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখতে সাহায্য করেছে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ফলে জনগণ নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার তথ্য-সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইউ.এন কনভেনশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের মতে, শুধু সাংবিধানিক অধিকার নয় বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের মানবাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব বেআইনি কর্মকাণ্ড গুরুতর অপরাধ।

নির্বাচন কমিশনের নিকট আমাদের জোর দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। জনগণ যেন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের অনুলিপি পাওয়ার পর তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার।