‘মার্চেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে’

আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের সামনে মাথা নিচু করে বাঁচতে চাই না, আমরা মাথা উঁচু করে বাঁচবো।’

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ২৬৫ শিক্ষার্থীর হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। আমাদের শিক্ষা হবে যুগোপযোগী। বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। তাই শিক্ষাকেও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।’ এসময় দেশে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া ও শিক্ষা খাতের বিভিন্ন উন্নয়নে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান তুলে ধরেন।

শিক্ষা খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেশেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই আমি লক্ষ করেছি, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার আগ্রহ কম। তাই ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। আমাদের চেষ্টা, শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। আমাদের দেশের আরেকটা সমস্যা, গবেষণায় কোনও বরাদ্দ দেওয়া হয় না। আমরা প্রথম ক্ষমতায় এসে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়া শুরু করি। পরে নিয়মিত গবেষণায় বরাদ্দ দিয়ে আসছি, যার ফল আজ আমরা ভোগ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ। আমাদের লক্ষ্য, দেশে একজন মানুষও যেন নিরক্ষর না থাকেন। আমাদের দেশের মানুষকে উন্নত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক মা-বাবা তার সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারেন না। তাই আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করে দিলাম। বলতে গেলে শিক্ষা অর্জন একেবারে ফ্রি করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। ফলে মা-বাবার ওপর থেকে বই কেনার বোঝা কমেছে। এছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষায় আগ্রহ বাড়াতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়িয়েছি। দেশে কোনও চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। আমরা সেটা করেছি। কিন্তু শুধু সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ শিক্ষাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা বেসরকারিভাবেও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছি। সরকারি বা বেসরকারি— যেভাবেই হোক প্রতি জেলায় আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, যেন সবাই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী। তাদের জন্য কেবল সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আজ ২৬৫ জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে প্রতিবছর এত এত শিক্ষার্থী এত ভালো ফল করে।’ এসময় সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় মেয়েদের উন্নতির প্রসঙ্গ টেনে তাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সমাজে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ থাকা উচিত। আমি খেয়াল করেছি, শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, তারা খুব ভালো ফলও করছে। এর জন্য আমি খুবই আনন্দিত। আসলে, মেয়েরা যখনই যে কাজ করে, খুব মনোযোগ দিয়েই করে। আমি ছেলেদের বলতে চাই, পড়ালেখায় তোমাদের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ২৬৫ শিক্ষার্থীর হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিজ নিজ অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ দিয়ে থাকে ইউজিসি। এবার যে ২৬৫ শিক্ষার্থীকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ২০১৫ সালের শিক্ষার্থী ১২৪ জন, ২০১৬ সালের ১৪১ জন।