মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির পালে হাওয়া

কয়েক বছরের মন্দা কাটিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমবাজারে আবার আলোর ঝলকানি দেখা দিয়েছে। জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি এরই মধ্যে শ্রমিক পাঠানোর কাজ করছে।

ছোটখাটো নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কাজ করছে। দিন দিন বাড়ছে শ্রমিক নিয়োগের চাহিদাপত্র।

প্রবাসে যেসব বাংলাদেশি কাজ করেন, তাদের মধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আছে সৌদি আরবে। তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়া হয়ে উঠছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আগ্রহের জায়গা।

চলতি শতকের শুরুর দিকে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজার চালু করতে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। সরকারিভাবে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপুল টাকা খরচের চিত্রটাই পাল্টে দেয়।

তবে খুব বেশি শ্রমিক সরকারি উদ্যোগে পাঠানো যায়নি। ২০১৩ সালে করা জিটুটি চুক্তি সেভাবে সফল না হওয়ার পর জিটুজি প্লাস চুক্তি এই চিত্র পাল্টে দিচ্ছে।

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক পাঠাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে করা জিটুজি প্লাস চুক্তি হওয়ার পর থেকে এক লাখেরও বেশি শ্রমিক গেছেন এশিয়ার আলোচিত দেশটিতে।

কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ মিশনের তথ্য মতে, গত বছর মার্চে জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার শ্রমিকের চাহিদাপত্র মিলেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাড়পত্র দিয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। কাজে যোগ দিয়েছেন ৮৩ হাজার শ্রমিক।

কুয়ালালামপুর দূতাবাসের লেবার উইং এর কর্মকর্তা ছায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘মাসে কমপক্ষে ২০টি কোম্পানি পরিদর্শন করতে হচ্ছে। তবে ২০ জন শ্রমিকের জন্য চাহিদাপত্রে পরিদর্শন লাগে না। এর বাইরে হলেই আমাদেরকে যেতে হয়।

আবার জিটুজি প্লাস চুক্তিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন বলা হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। সেই সঙ্গে মিলছে অন্যান্য নানা সুযোগ সুবিধা যা এর আগে শ্রমিকরা কখনও পায়নি।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় এখন মাসে বেতন কমপক্ষে দেড় হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি টাকায় ৩১ হাজার পাঁচশ টাকা)। আবার বার্ষিক লেভির টাকা (সরকারি কর) অগ্রিম দিতে হচ্ছে মালিকপক্ষকে। এটা আগে বহন করতে হতো শ্রমিকদের। বেতন থেকে মাস মাস কেটে নেয়া হতো এই টাকা। ছিল না কোনো বিমা, স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা বা মানসম্মত আবাসনের নিশ্চয়তা। এখন নিয়োগকর্তারাই বহন করছে সব কিছু। কোম্পানির সব তথ্যই সচিত্র মিলছে অনলাইনে। ফলে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় বেড়ে গেছে আরও বেশি। আর এতে তারা আগের চেয়ে বেশি সঞ্চয় বা দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন।

বাংলাদেশের শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করতে পারে বলে নিয়োগকর্তাদের আগ্রহ বাড়ছে দেশটিতে। কুয়ালালামপুরের অদূরে সুঙ্গাইবুলু ফার্নিচার কারখানার মালিক মি. লিম বাংলাদেশি শ্রমিক সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রমী, প্রতিদিন ওভারটাইম করলেও সমস্যা হয় না। ফলে তুলনামূলক কম শ্রমিকই অনেক বেশি কাজ করতে পারে। এতে তারাও যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি আমরা কারখানা মালিকরাও লাভবান হচ্ছি।’

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে কর্মরত শ্রমিকের সর্বোচ্চ সংখ্যা বরাবরের মত ইন্দোনেশিয়ার দখলে। ইন্দোনেশিয়ার জনশক্তি নির্মাণ খাতে দক্ষ হওয়ায় তাদের বিকল্প নাই। তবে গত তিন-চার বছরে বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও বিপুল পরিমাণে নির্মাণ খাতে যোগ দিয়েছে।

এখন বাংলাদেশি শ্রমিকরা সমান তালে এগিয়ে চলেছে নির্মাণ, কারখানা, সেবা, কৃষিও বাগান খাতে।

নেপালের প্রায় নয় লাখ শ্রমিক সেবা, নিরাপত্তা ও কারখানা খাতে কাজ করছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা খাতে নেপালের বিকল্প অচিন্তনীয়। তবে ইদানীং এসব খাতেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিয়োগ পাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। মালিকরা ইদানীং নেপালিদের তিন বছরের চুক্তি নবায়ন না করে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে।