মাশরাফির রংপুরকে হারিয়ে দিলো মিরাজের রাজশাহী

প্রথম ইনিংস শেষে রাজশাহীর সংগ্রহ যখন মাত্র ১৩৫, তখনই মূলত ম্যাচ শেষ হয়ে যায় অর্ধেক। ক্রিস গেইল, রিলে রুশো, রবি বোপারাদের সামনে ১৩৬ রানের এই লক্ষ্য মামুলিই হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটিকে এতোটা সহজ হতে দেননি রাজশাহী কিংসের বোলাররা।

অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ, বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান এবং দুই বিদেশি মোহাম্মদ হাফিজ ও ইসুরু উদানার দুর্দান্ত বোলিংয়ে রংপুর রাইডার্সকে ১৩০ রানেই বেঁধে ফেলে রাজশাহী কিংস। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সকে ৫ রানে হারিয়ে আসরে নিজেদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিলো মেহেদি মিরাজের দল।

১৩৬ রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই চমক দেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দলের নিয়মিত ওপেনারদের রেখে ক্রিস গেইলকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই নেমে যান ইনিংসের সূচনা করতে। কিন্তু কাজে লাগেনি তার এই বাজি। ইনিংসের প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাজঘরে।

ক্যারিবীয়ান দানব ক্রিস গেইল আভাস দিয়েছিলেন ঝড় তোলার। কামরুল ইসলাম রাব্বির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম পাঁচ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ২০ রান নিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু শেষ বলে লো ফুলটসে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ২৩ রানে আউট হয়ে যান তিনি।

তৃতীয় উইকেটে রিলে রুশো এবং মোহাম্মদ মিঠুন দায়িত্বশীল ব্যাটে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। দুজনের ৪০ রানের জুটির সময় মনে হচ্ছিলো সহজেই জিততে যাচ্ছে রংপুর। কিন্তু দলীয় ৭১ রানের মাথায় মিঠুন ৩০ রান করে ফিরে যাওয়ার পর ছোট একটা ধস নামে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ইনিংসে।

রবি বোপারা ২ এবং বেনি হাওয়েল ৪ রান করে আউট হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় রংপুর। তখনো তাদের আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন রিলে রুশো। তাকে সাহস জুগিয়ে নাহিদুল ইসলাম ১২ বলে ১৬ রান করলে সমীকরণ খানিক সহজ হয়ে যায়।

তবে ১৯তম ওভারের শেষ বলে নাহিদুল আউট হয়ে গেলে শেষ ওভারে চাপে পড়ে যায় রংপুর। ৬ বলে তাদের জয়ের জন্য দরকার থাকে ৯ রান। মোস্তাফিজের করা সে ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক ছাড়েন রুশো, এরই সাথে যেনো ম্যাচটাও ছেড়ে দেন তিনি।

কেননা পরের চার বলে মোস্তাফিজের কাটার বুঝতেই পারেননি ফরহাদ রেজা। ওভারের পঞ্চম বলেও ব্যাট ছোঁয়াতে বাই রান নিয়ে স্ট্রাইকে রুশোকে আনেন তিনি। শেষ বলে ৭ রানের চাহিদায় মাত্র ১ রান নিতে সক্ষম হন রুশো। ৪৬ বলে ৪৪ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন তিনি। রাজশাহী জয় পায় ৫ রানের ব্যবধানে।

এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রংপুর রাইডার্সকে মাত্র ১৩৬ রানের লক্ষ্য বেঁধে দিতে সক্ষম হয় রাজশাহীর দলটি।

তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান কিছুটা প্রতিরোধ করে না দাঁড়ালে রাজশাহীর রান ১০০ কোটায় গিয়ে হয়তো থেমে যেতো। ৩৬ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন জাকির হাসান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান করতে সক্ষম হয় রাজশাহী।

টস করতে নেমে মাশরাফির কাছে পরাজিত হন মিরাজ। তবে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পান তিনি এবং তার দল। মুমিনুল হকের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু আগের দুই ম্যাচের মত এবার আর ব্যাট হাতে বাজিমাত করতে পারেননি তিনি।

মাশরাফিকে প্রথম বল মোকাবেলা করেন এবং ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়লেন শফিউল ইসলামের হাতে। অপর ওপেনার মুমিনুল হক এই ম্যাচেও নিজেকে খুঁজে পাননি। ১৬ বল মোকাবেলা করে তিনি বিদায় নেন ১৪ রান করে।

সৌম্য সরকার মাঠে নেমে ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ২টি বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ১৩ বলে ১৮ রান করে তিনিও ফিরে যান মাশরাফির বলে।

পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ এখনও পর্যন্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এই ম্যাচে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিছুটা। কিন্তু যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ বলই ব্যায় করেছেন শুধু। ২৯ বল খেলে ২৬ রান নিয়ে রানআউট হয়ে যান তিনি।

লরি ইভান্স মাঠে নেমে ফিরে যান মাত্র ২ রান করে। ফরহাদ রেজার বলে বোপারার হাতে ক্যাচ দেন তিনি। রায়ান টেন ডেসকাটও হলেন রানআউট। ১০ বলে ১৪ রান করেন তিনি। ইসুরু উদানার ব্যাট থেকে আসে ৮ রান।

দলকে ১৩৫ রানে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জাকির হাসান। ৩৬ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। রংপুরের পক্ষে বল হাতে মাশরাফি এবং ফরহাদ রেজা মিলে ২টি করে উইকেট নেন। সোহাগ গাজী এবং শফিউল ইসলাম মিলে নেন ১টি করে উইকেট।

৩৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কার মারে ৪২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরষ্কার জিতেছেন রাজশাহীর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান।