‘মিন্নিকে ট্যাবলেট খাইয়ে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়’

মিন্নির মা মিলি আক্তার দাবি করে বলেন, পুলিশের নির্যাতন ও ভয়ে তাদের লিখে দেওয়া জবানবন্দি মিন্নি আদালতে দিয়েছে। সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা মাইঠা এলাকার বাসভবনে এসব কথা বলেন তিনি।

মিন্নির মা মিলি আক্তার বলেন, আমার মেয়েকে রিমান্ডের নামে আটকে রেখে রাতভর পুলিশের লিখে দেওয়া জবানবন্দি মুখস্থ করানো হয়। মিন্নিকে ট্যাবলেট মেশানো পানি খাইয়ে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সেই জবানবন্দি না দিলে মা-বাবাকে আটক করে নির্যাতন করা হবে বলেও হুমকি দেয় রিতা নামের একজন এএসআই। পুলিশি নির্যাতন ও ভয়ে আমার মেয়ে আদালতে পুলিশের লিখে দেওয়া জবানবন্দি প্রদান করেছে।

তিনি বলেন, আমার মেয়েকে তিনদিন পুলিশ না খাইয়ে রেখেছে। পানি খেতে চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে ট্যাবলেট মিশানো পানি মিন্নিকে খেতে দেওয়া হয়। পুলিশের লেখা জবানবন্দি মুখস্থ করানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখে। বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশের মন গলেনি। পুলিশ আমার মেয়েকে বলতে বলে, তুমি আদালতে বলবা, আমার স্বামী তো ভালো না, তাই হালকা পাতলা মাইর দেওয়ার কথা বলেছি। তাহলে তোমার শাস্তি কম হবে। পুলিশের শিখিয়ে দেওয়া কথা অনুযায়ী মিন্নি আদালতে এরকম স্বীকারোক্তি প্রদান করে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে আসামি শনাক্ত করার কথা বলে বরগুনার পুলিশ লাইনসের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে ১০-১২ ঘণ্টা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। রবিবার (৪ আগস্ট) আমরা মিন্নির সঙ্গে জেলা কারাগারে দেখা করতে গেলে আমাদের কাছে সেই নির্যাতনের বর্ণনা দেয় মিন্নি।

মিলি আক্তার বলেন, আমার মেয়ে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নয়ন বন্ডের মতো গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীকে আমার মেয়ের সামনে এনে বলতে বলে, বল তোদের সঙ্গে মিন্নিও জড়িত ছিল। পুলিশের চাপে ও শারীরিক নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা তা বলতে বাধ্য হয় এবং মিন্নি এই ঘটনায় জড়িত ছিল বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

উল্লেখ্য, ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-এ বাংলা মেডিক্যালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এই ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত মিন্নিসহ ১৫ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।