মিন্নিকে সহায়তা দিতে ৪০ আইনজীবী যাচ্ছেন বরগুনায়

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে লড়তে ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদসহ ৪০ জন আইনজীবী বরগুনা আদালতে শুনানির জন্য যাবেন।

আগামী ২৩ জুলাই হাইকোর্ট ও জজকোর্ট মিলিয়ে ৪০ সদস্যের আইনজীবী টিম যাবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ।

তিনি বলেন, শনিবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সদস্য ইব্রাহিম খলিল মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। সে সময় মিন্নির বাবা সাহায্য চান ইব্রাহিম খলিলের কাছে। ঢাকা থেকে আইনজীবী নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেন তিনি। তার সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই আমরা হাইকোর্ট ও জজকোর্ট মিলিয়ে ৪০ সদস্যের আইনজীবী টিম যাব বরগুনায়।

এ বিষয়ে আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সদস্য ইব্রাহিম খলিল বলেন, ফোনে মোজাম্মেল হোসেনকে আইনি সহায়তা দেয়ার কথা বলায়, তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে আমাদের যেতে অনুরোধ করেন। আমরা আগামী ২৩ জুলাই বরগুনা আদালতে শুনানিতে যাব।

অনেক আইনজীবী ও হিউম্যান রাইটস সংগঠনের সদস্য শুনানিতে যেতে ইচ্ছুক বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এ ধরনের বিচারিক কার্যে আদালতে দুই পক্ষের আইনজীবী থাকলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।

গত মঙ্গলবার গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে হাজির করা হয় রিফাত হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে। এদিন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এ সময় এজলাসে মাথা নিচু করে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাকে।

ওই দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সঞ্জিব দাস। তিনি আদালতকে জানান, এ ঘটনায় আইনজীবীদের কেউ আসামিদের পক্ষে নিয়োগ না হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে মিন্নির পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি কেবল এ মামলার সাক্ষীই নন, তিনি নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রীও। ঘটনার দিন তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সেই দৃশ্যও দেখা গেছে। ফেসবুকে মিন্নির এই সাহসিকতার প্রশংসাও করেছেন অনেকে। কিন্তু বুধবার বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির পক্ষে বারের একজন আইনজীবীও এগিয়ে আসেননি। সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ঝড় বইতে থাকে।

এ বিষয়ে মিন্নির বাবা বলেছিলেন, মঙ্গলবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। সাক্ষী থেকে আসামি হওয়ার পরই আমি মিন্নির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করি। রাতেই পরিচিত ৩জন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তারা তিনজনই মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারা জানিয়েছেন, আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা মিন্নির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে থাকবেন না।

পরে মিন্নির বাবা আরও বলেছিলেন, আমার মেয়েকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে আমার মেয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার নাসির ও অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদেরের দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু কী কারণে তারা দাঁড়াননি আমি বলতে পারব না। তবে ধারণা করছি, প্রতিপক্ষের ভয়ে হয়তো কোনো আইনজীবীরা দাঁড়াননি।’

কোন প্রতিপক্ষের কারণে আইনজীবী দাঁড়াননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোন প্রতিপক্ষ সেটি আপনারাই বুঝে নিন। আমি বলতে গেলে বরগুনা থাকতে পারব না। এ ছাড়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সে কারণেই হয়তো সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।’

মিন্নির বাবার এসব বক্তব্য বিবেচনা করে আগামী ২৩ জুলাই ৪০ সদস্যের আইনজীবী টিম বরগুনা আদালতে শুনানির জন্য যাবেন।