মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়নের দায়ে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন।

সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে জবাবদিহিতার পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তবে একের পর এক আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করেই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর এখনও চলছে সহিংসতা আর বর্বর নির্যাতন। প্রতিদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গারা আসছে বাংলাদেশ সীমান্তে। ২৫ আগস্টে সাম্প্রতিক নিধন অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কঠোরভাবে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনরে প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন। আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন: আবারও রাখাইনের সহিংসতায় জড়িত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবারও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কোন গঠনমূলক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের পাঁচদিনের সফর। সংকট নিরসনে ওই সফরকে মিয়ানমার সরকারের সাথে চলমান আলোচনার অংশ বলছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফেন দুজারিক।

রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।