মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে হিন্দুরাও

রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন আর হত্যাযজ্ঞের মুখে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে এবার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনও মিয়ানমার ছেড়ে জীবন নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে।

গত বুধবার চার শতাধিক হিন্দু বাংলাদেশের কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনবি) মোহাম্মদ মইনুদ্দিন জানান, রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ৪১২ জন হিন্দু সীমান্ত পার হয়ে বুধবার রাতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদের মতো এই হিন্দু সম্প্রদায়ের শরণার্থীদেরও নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ভুক্তভোগী হিন্দুরা বলছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকে তাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।

রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার বাসিন্দা বকুল বালা বলেন, ‘একদল সশস্ত্র লোক মুখোশ পরে গ্রামে ঢুকে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তাঁরা আমাদের কয়েকটি পরিবারকেও তুলে নিয়ে যায় এবং পরে তাদের খুন করে।’

মংডুর আরেক বাসিন্দা দিজেন্দ্র বলেন, ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী কোচাং হিন্দুপাড়ার ৮৬ জনকে হত্যা করেছে।’

এরই মধ্যে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার শাখার নেতারা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া হিন্দুদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় তাঁরা মিয়ানমার থেকে আসা হিন্দুদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য প্রশাসন ও স্থানীদের প্রতি আহ্বান জানান।

গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকে। সীমান্তে তাদের বাধা দেয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক সপ্তাহে শত শত রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

পালিয়ে আসা নারী-পুরুষদের অনেকেই সীমান্ত এলাকায় বসে আছে। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে অসহায় জীবনযাপন করছে তারা।

গত বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে ১৮ হাজার (রোহিঙ্গা) এসেছে। তাঁরা কক্সবাজারের লেদা, কুতুবপালং, বালুখালির গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।

মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

এরপর ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রায় একশ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও বাকিদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতার কার্যালয়।

গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য মারা যান। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে।

জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এক পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

এর আগে ২০১২ সালের জুনেও মিয়ানমারে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নেয়। যার ফলে ওই সময়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা পুশব্যাক করা হয়।