মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে তার লেখা মাত্র একটি বই

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুরের পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে লেখকের লেখা ‘বিষাদ সিন্ধু’ ছাড়া তার লেখা আর কোনো বই নেই। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীসহ অনেকে মশাররফ হোসেনের লেখা বইসহ তার স্মৃতি সংরক্ষেণের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো কাজে আসেনি।

আগামী ১৩ নভেম্বর মশাররফ হোসেনের ১৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রটির ভেতরে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। সেইসঙ্গে চলছে জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতিও।

মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে মারা যান তিনি। পরে সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।

তার স্মৃতি ধরে রাখতেই ২৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদীতে ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালে তৈরি হয় এ সাহিত্যিকের স্মৃতি কেন্দ্রটি। যেটা ২০০৫ সালের ২০ এপ্রিল উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। স্মৃতি কেন্দ্রটি নির্মাণের এক যুগ অতিবাহিত হলেও তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। দর্শনার্থীরা মীর মশাররফ হোসেন, তার স্ত্রী ও এক ভাইসহ তার স্ত্রীর সমাধীস্থলসহ কেন্দ্রটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখলেও তার জীবন ও লেখা সর্ম্পকে জানতে কেন্দ্রের গ্রন্থাগারে গিয়ে বিষাধ সিন্ধু ছাড়া পান না অন্য কোনো বই।

কালজয়ী এ সাহিত্যিকের স্মৃতিকেন্দ্রে রয়েছে মীর মশাররফ হোসেন, তার স্ত্রী বিবি কুলসুম, ভাই মীর মোকাররম হোসেন ও তার স্ত্রী বিবি খোদেজা বেগমের সমাধী সৌধ। রয়েছে মশাররফের ভাস্কর্য, সংগ্রহশালা, সভাকক্ষ, গ্রন্থাগার, পাঠাগার, অভ্যার্থনা কক্ষ, ভিআইপি রুম ও আবাসান কর্মকর্তার কক্ষ।

বর্তমানে স্মৃতিকেন্দ্রের গ্রন্থগারে তার শ্রেষ্ঠ লেখা উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসের ইংরেজি ভার্সনের ৩ কপি ও বাংলা ভার্সনের ১টি কপি ছাড়া অন্য কোনো বই নেই।

দর্শনার্থীরা জানান, ছোট বেলায় যে কবির লেখা পড়ে বড় হয়েছেন, সে কবির স্মৃতি বিজড়িত স্থানে আসতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। তবে তার একমাত্র স্মৃতি কেন্দ্রটি এখানে অবস্থিত হলেও কেন্দ্রটির গ্রন্থাগারে রয়েছে তার লেখা একটি মাত্র বই। এর চাইতে দুঃখের আর কী হতে পারে।

স্মৃতি কেন্দ্রের অফিস সহকারী বাবুল আক্তার জানান, পর্যায়ক্রমে তার সব লেখা আনা হবে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমিকে জানানো হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে যে লোকবল থাকা প্রয়োজন, সে তুলনায় লোকবল নেই। উদ্বোধনের পর থেকে কোনো সংষ্কার কাজও হয়নি। যে উদ্দেশ্যে স্মৃতি কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে তার কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, মীর মশাররফ হোসেনের লেখা প্রতিটি বইয়ের ৫টি করে কপি দ্রুত কিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মৃতি কেন্দ্রে সংরক্ষণের জন্য দেয়া হবে।