মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের চিহ্ন পাকিস্তানি জাহাজ ভেঙে বিক্রির চেষ্টা!

মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার স্মারক পাকিস্তানি জাহাজটি দিন-দুপুরে টুকরো টুকরো করে কেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল একটি পক্ষ। তবে এমভি আকরাম নামের জাজাহটি পুরো ভেঙে ফেলার আগে পুলিশ উপস্থিত হওয়ায় শেষপর্যন্ত রক্ষা করা গেছে। কিন্তু আর আগেই জাহাজটির কিছু অংশ ভেঙে বিক্রি করে দেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষ্যা পাড়ে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল ১০টায় বন্দর থানার সোনাকান্দা এলাকার শীতলক্ষ্যা পাড়ের আহাম্মদ ডকইয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, মোক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তি জাহাজটির মালিকানা দাবি করে বন্দর থানায় জিডি এন্ট্রি করেন। ওই জিডির ফলেই ফলে করা গেছে জাহাজটিকে।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে বন্দর থানার হাজীপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন ও কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দী থানার গোপচর এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেন মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম তৎকালীন সময়ে শিল্প ব্যাংক থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা মূল্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের চিহ্নধারী এমভি আকরাম নামের জাহাজটি ক্রয় করেন।

জাহাটি কেনার পর তারা জানতে পারেন যে এটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত জাহাজ।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাহাজটি চাঁদপুর থেকে এনে দীর্ঘ ৭বছর ধরে সোনাকান্দা হাট সংলগ্ন এলাকায় রেখে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে মোক্তার হোসেন আরো জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সোনাকান্দা পানির ট্যাংকি এলাকার মৃত চান মিয়ার ছেলে জসিম আহাম্মেদ তোতা ও পশ্চিম হাজীপুর এলাকার মৃত সফুউল্ল্যাহ মিয়ার ছেলে এবাদুল্লাহসহ কয়েকজন আহাম্মদ ডকইয়ার্ডে নিয়ে ওই জাহাজটি কেটে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে মোক্তার হোসেন বন্দর থানায় জিডি এন্ট্রি করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জাহাজ কাটায় বাধা প্রদান করে।

তবে কাউকে আটক করা হয়নি।

জানা গেছে, বর্তমানে অকেজো জাহাজটি হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বাহন ছিল। এতে করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দখলদার বাহিনীর রসদ আনা-নেওয়ার কাজ চলতো। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অসীম সাহসী নৌ কমান্ডোরা চাঁদপুর নৌবন্দরে থাকা এমভি আকরাম, এমভি লোরামসহ বেশকিছু পাকিস্তানি জাহাজে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেগুলো ডুবিয়ে দেন। যখন এসব অপারেশন চালানো হয় তখন ওইসব জাহাজ দখলদার পাকিস্তানি হায়েনা ছাড়াও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের কঠোর পাহাড়ায় ছিল।

পরবর্তীতে নদীবক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় এমভি আকরামকে।

মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক এই জলযানটিকে অতি দ্রুত সংরক্ষণ করা উচিৎ বলে জানান স্থানীয়রা। ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমাদের জাতির গৌরবের চিহ্নটি দেখার সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।