মুখ দেখে মনোনয়ন দিব না : শেখ হাসিনা

দলের নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন সভায় অংশ নেওয়া কয়েকজন সংসদ সদস্য। রাত সোয়া ৮টার দিকে এ সভা শুরু হয়।

সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আমি জরিপ করছি। মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থান তার আমলনামা আমার কাছে আছে। জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার বাড়ান, জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারে যারা এগিয়ে রয়েছেন তারাই মনোনয়ন পাবেন। কারো মুখ দেখে আমি মনোনয়ন দেব না, দিতে পারব না। সবাই কাজ করছে, আমি নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করছি। কে কী কাজ করেছেন, সবার তথ্য আমার কাছে আছে।

তিনি বলেন, দলের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে তা সহ্য করা হবে না। মনে রাখবেন, সবার আমলনামা আমার হাতে রয়েছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না। তাই এলাকায় যার জনপ্রিয়তা রয়েছে, দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ছাড়াও জনগণ যার সঙ্গে রয়েছে, তিনিই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। দলের মধ্যে কোনরূপ দ্বন্দ্ব-বিবাদ বা কোন্দলে জড়িত হবেন না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। দলের বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা করা হবে না। আর জনপ্রিয়তার ভিত্তিতেই আমি মনোনয়ন দিব। যারা এলাকায় নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা রক্ষা করতে পারেননি, তারা যত বড়ই নেতা হোক আগামীতে মনোনয়ন পাবে না।

এর আগে কয়েকজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
পরে শেখ হাসিনা বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দলের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নেতারাই মনোনয়ন পাবেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে কোন্দল করে লাভ নেই। কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সে বিষয় আমি দেখব। আর একটি আসনে দশ জন প্রার্থী থাকতেই পারে। সবাই সরকার, দল ও নৌকার পক্ষে ইতিবাচক কথা বলবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার গত ৮ বছরে দেশের যত উন্নয়ন করেছে, গত ৪০ বছরে অন্য সরকারগুলো তা করতে পারেনি। তাই ভোটে বিজয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়েই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে যান। দেশের জনগণ আমাদের পক্ষেই রয়েছেন। ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচনেও জনগণের ভোটে আমরা বিজয়ী হব। তাই আর কোন সময় অপচয় নয়, নির্বাচনী এলাকায় জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করুন।

তিনি বলেন, আমরা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, আরও অনেক উন্নয়ন পাইপ লাইনে আছে। এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে, বুঝাতে হবে সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। তাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামুন।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে বুঝাতে হবে এরা (বিএনপি) আবার ক্ষমতায় আসলে দেশ আবার অন্ধকারে ডুবে যাবে, উন্নয়ন-অগ্রগতি থমকে যাবে, দুর্নীতি-দুঃশাসন আবার ফিরে আসবে। বিএনপি তো আগেও দুই বার ক্ষমতায় ছিল। কেন তারা আমাদের মতো উন্নয়ন করতে পারেনি, কেন দেশকে সবক্ষেত্রে পিছিয়ে দিয়ে গেছে। ওরা ক্ষমতায় আসলে আবারও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করবে- এ বিষয়গুলোও জনগণকে জানাতে হবে।