মুন্সীগঞ্জে পঞ্চম দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ সেই ২০ শ্রমিকের

সাইড স্ক্যানার সোনার ও গেরাপির মাধ্যমে পাঁচ দিন চেষ্টার পর মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া মাটিবোঝাই ট্রলার ও নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের সন্ধান না পাওয়ায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে মুন্সীগঞ্জ অংশের উদ্ধার অভিযান।

শনিবার বিকাল ৫টার দিকে সমাপ্ত ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসন। তবে রোববার থেকে চাঁদপুর অংশে অভিযান শুরু হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা শনিবার দুপুরে উদ্ধার অভিযান পরিদর্শনকালে জানান, সন্ধ্যায় পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে, যদি ট্রলার শনাক্ত না হয় তবে রোববার থেকে নদীর গজারিয়া থেকে দক্ষিণে অর্থাৎ চাঁদপুর অংশে অভিযান চালানো হবে। সন্ধ্যায় তিনি মুন্সীগঞ্জ অংশে অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করে চাঁদপুর অংশে অভিযান চালানো তথ্য নিশ্চিত করেন।

উদ্ধারকারীরা জানান, মেঘনা নদীর মুন্সীগঞ্জ সীমানায় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়েছে। কোথাও ট্রলারটির অবস্থান খুঁজে সন্ধান পাওয়া যায়নি। ট্রলারটি সম্ভবত চাঁদপুর সীমানা ডুবেছে। আপাতত মুন্সীগঞ্জ অংশে তল্লাশি অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। রোববার থেকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হবে।

মেঘনা নদীতে মুন্সীগঞ্জ অংশে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডাব্লিউটিএ, নৌপুলিশ ও জেলা পুলিশ সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিস এবং নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের সদস্যরা মাঝ নদীতে নোঙর করে নদীর তলদেশে তল্লাশি করে। উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ও ফায়ার সার্ভিসের নৌযান শনাক্তকারী বিশেষ জাহাজ অগ্নিশাসকও ছিল উদ্ধারকাজে।

পাশাপাশি বিআইডাব্লিউটিএর সাইড স্ক্যান সোনার দিয়েও ডুবে যাওয়া ট্রলারটির অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালানো হয় পঞ্চম দিনেও। তিন স্তরে মুন্সীগঞ্জের সীমানাবর্তী মেঘনা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়।

মুন্সীগঞ্জ অংশে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করার বিষয়টি স্বীকার করে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসান সাদি জানান, তিন স্তরে মেঘনা নদীর মুন্সীগঞ্জ অংশ তল্লাশি চালানো হয়েছে। কোথাও ডুবে যাওয়া ট্রলার ও নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান মিলেনি। মুন্সীগঞ্জ অংশে আপাতত উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এদিকে সকাল থেকেই মেঘনা নদীসংলগ্ন গজারিয়া উপজেলার কালিয়াপুর এলাকায় দেখাযায় নিখোঁজ স্বজনেরদের ভিড়। জীবিত বা মৃত অবস্থায় হলেও শেষ সন্ধান চান পাড়ে ভিড় জমানো এসব নারী-পুরুষরা। তারা জানান, দিন বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া নিয়ে তাদের মাঝে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বিআউডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারটি যদি নদীর তলদেশের কোনো গর্তে পড়ে থাকে সেক্ষেত্রে ট্রলার ওপর বালির গভীর আস্তর পরে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রলারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া দুষ্কর হবে। না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এর আগে শুক্রবার রাতে গজারিয়া থানায় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ান, সারেং হাবিব ও দুর্ঘটনায় জড়িত তেলের ট্যাংকারের চালককে আসামি করে মামলা করেছে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী শাহ আলম।

উল্লেখ্য সোমবার ভোর রাত ৩টার দিকে চাঁদপুরের মতলব উপজেলা ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা সীমান্তবর্তী কালিপুরা এলাকাসংলগ্ন মেঘনা নদীতে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্যাংকারের ধাক্কায় ৩৪ শ্রমিক নিয়ে ডুবে যায় মাটিবোঝাই ট্রলারটি। ট্রলারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ রয়েছেন ২০ শ্রমিক।

নদী সাঁতরে তীরে ওঠা শ্রমিকদের বরাত দিয়ে গজারিয়া নৌপুলিশ জানায়, মাটি নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলীর দিকে যাচ্ছিল ট্রলারটি। নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় মিলেছে। ১৭ জনের বাড়ি পাবনার ভাংগুড়া উপজেলায়।