মুর্তজার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করছে সৌদি আরব

সৌদি আরবে ১৩ বছর বয়সে আটক মুর্তজা কুরেইরিসকে দেয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে দেশটির সরকার। ২০২২ সালেই তাকে মুক্তি দেয়া হতে পারে।

শনিবার (১৫ জুন) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বিবৃতিতে দেয়া হয়নি।

আরবের দুর্নীতিপ্রবণ ও জনবিরোধী শাসকদের বিরুদ্ধে আরব বসন্ত নামে পরিচিত আন্দোলনের সময় সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল শিশু মুর্তজা কুরেইরিস। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় সাইকেলে করে অহিংস প্রতিবাদে নেমেছিল সে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সম্প্রতি তাদের এক বিশেষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে পারে, সুদীর্ঘ নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মুর্তজার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে ওই শিশুর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিএনএন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সত্যতা যাচাই করেছে। লেখক-সাংবাদিক ইয়ান ফ্রেজার এক টুইট বার্তায় বলেন, সৌদি তরুণ ১০ বছর বয়সে গণতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদে নামার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পেতে যাচ্ছে, এরপর তার মরদেহ সম্ভবত জনসম্মুখ ঝুলিয়ে রাখা হবে।

তবে সর্বশেষ সৌদি কর্মকর্তা জানালেন, মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে না মুর্তজাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে না।

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর সারাবিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়েছে সৌদি আরব। এছাড়া মানবাধিকারকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে সৌদি সরকারের।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুদণ্ড আদতে সরকারের শিয়াবিরোধী দমন অভিযানের অংশ। তবে সৌদি আরব বরাবরই এই শিয়াবিরোধী অভিযানের ব্যাপারে অস্বীকার করে আসছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মুর্তজা পুলিশ ও ফার্মাসিকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করেছে, গুলি চালিয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে জার্মান রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা চালানোরও চেষ্টা করেছে সে।

তবে ২০১১ সালে মুর্তজা যখন সাইকেল নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। ৩ বছর পরে ২০১৪ সালে তাকে যখন আটক করা হয়, তখন তার বয়স ১৩।

তার মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সৌদি রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের মিত্র শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলও সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বুদ্ধিজীবীসহ বহু মানুষ এই প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন।