মুশফিক বাদ, টেস্টের নতুন অধিনায়ক সাকিব

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের মাঝে সংবাদ সম্মেলনে কোচের বিপক্ষে কিছু বিতর্কিত কথা বলছিলেন মুশফিকুর রহীম। আর তা পছন্দ হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। তখন থেকেই তাকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জোর গুঞ্জন ছিল। অবশেষে সেই গুঞ্জন সত্যি হলো। টেস্ট দলের অধিনায়কের পদ হারিয়েছেন মুশফিক। তার বদলে এই সংস্করণের অধিনায়ক করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। টি-টুয়েন্টির পর টেস্টেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন বিশ্বসেরা এই অল রাউন্ডার। আর তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের পর এই ঘোষণা দিয়েছেন সংস্থাটির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

অধিনায়ক বদলেছে। বদলেছে সহ অধিনায়ক তামিম ইকবালের ভূমিকাও। সেখানে এখন মাহমুদউল্লাহ। যাকে কদিন আগেও টেস্ট দল থেকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো অধিনায়ক কেন বদলালো বিসিবি? সেই প্রশ্নের জবাবে বোর্ড প্রধান পাপনের জবাব, আসলে মুশফিকের কাছ থেকে তার ব্যাটিংয়ের সেরাটা বের করে আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তারপরও প্রশ্ন উড়ে আসে। এছাড়া আর কোনো কারণ কি আছে? পাপন তা বললেন না। শুধু এইটুকু জানিয়ে দিলেন, অনেক কিছুই এভাবে প্রকাশ্যে বলা যায় না। সামনের মাসেই শ্রীলঙ্কা দল আসবে বাংলাদেশে। সেখান থেকেই শুরু হবে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অধিনায়কত্ব ও সহ-অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়।

মূলত নতুন কোচ নিয়োগের ইস্যুই ছিল মিডিয়ায়। কিন্তু চমক দেখিয়েছে বিসিবি! এদিন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে আলোচনা সভায় বসেন বোর্ড পরিচালকরা। কোচ নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তারা। কয়েকদিন সময় নিচ্ছেন। তবে টেস্ট দলের অধিনায়ক বদল করাটাই পাপনের মুখ থেকে এলো, ‘টেস্ট অধিনায়ক পরিবর্তন করেছি। আগামী সিরিজ থেকে টেস্ট অধিনায়ক হবে সাকিব। আর সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।’

তবে মুশফিককে বাদ দেওয়ার কোন কারণ উল্লেখ করেননি পাপন। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি, ‘নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে তা না। থাকলেও তা বলা যাবে না। আমরা মনে করেছি এখানে একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমরা মুশফিকের কাছ থেকে সেরা ব্যাটিংটা চাই। আমরা মনে করেছি এতে করে সে ব্যাটিংয়ে আরো বেশি মনোযোগী হোক। তাকে চাপমুক্ত করতে চাচ্ছি এবং সবমিলিয়ে আমরা সামনে একটা পরিকল্পনা করেছি আগামী ৪-৫ বছরের জন্য তারই একটা পদক্ষেপ।’ প্রসঙ্গত, ঠিক এই সময়টাতে মুশফিক নেই দেশে। তিনি আছেন থাইল্যান্ডে।

এর আগে কয়েকবার বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন তিন সংস্করণের জন্য তিনজন আলাদা অধিনায়ক চান। কিন্তু টি-টুয়েন্টির অধিনায়ক সাকিবকেই টেস্টের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হলো। এর ব্যাখ্যায় পাপন বললেন, ‘সাকিব হতে পারে পরবর্তীতে তিন সংস্করণের অধিনায়ক। হতে পারে। এখানে দুই ধরনের মতবাদ আছে। একটা আলোচনা ছিল আমরা তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক নিয়ে কাজ শুরু করব। যেটা আমরা করেছি। আরেকটা ছিল একই অধিনায়ক তিন সংস্করণে থাকা ভালো। দুটোরই ভালো মন্দ আমরা দেখছি। এই মুহূর্তে হওয়ার সুযোগ নেই। মাশরাফি ওয়ানডে অধিনায়ক। তাই হাত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আপাতত দু’জন অধিনায়কই থাকছে।’

২০০৯ সালের জুলাই থেকে প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি শুরু হয় সাকিবের। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে, নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ইনজুরিতে পড়লে। এরপর মাশরাফি আর টেস্টে ফিরতে পারেননি। সাকিব দেশের সপ্তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এরপর ২০১১ সালের আগস্টে তাকে বরখাস্ত করেছিল বিসিবি। সাকিবের জায়গায় মুশফিক হলেন অধিনায়ক। সাকিব তার আগে ৯ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একটিতে দেশকে জিতিয়েছিলেন। আর এক সময়ের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক মুশফিক রোববার হারালেন শেষ অধিনায়কত্বটাও। এই সময়ে ৩৪ টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ৭টিতে জিতিয়েছেন মুশফিক। চমক জাগানো কিছু জয় ছিল তার দলের। তার নেতৃত্বে ১৮ টেস্টে হেরেছে টাইগাররা, ড্র করেছে ৯টিতে।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে টেস্ট থেকে ছয় মাসের ছুটি নেন। সে অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা সিরিজেও তার বিশ্রামেই থাকার কথা। তবে ছুটি বাদ দিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়েই আবার টেস্টে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।