মৃত ভেবে লাশ ঘরে রাখা হয় মাহবুবাকে

ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৩তম বার্ষিকী আজ। হামলার পর ওইদিন মৃত ভেবে লাশের সঙ্গে রেখে দিয়েছিল তাকে। লাশঘরে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। সেই দুর্বিষহ স্মৃতির কথা আজও মনে পড়লে ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন।

দীর্ঘ ১৩ বছর পরও দুঃসহ যন্ত্রণাময় জীবনের অবসান ঘটেনি ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীনের।

শরীরের স্প্লিন্টারগুলোর পাশাপাশি সেদিনের ভয়াবহতার স্মৃতিগুলো সঙ্গে নিয়েই জীবন কাটছে তার।

সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকার বাসিন্দা মাহবুবা বলেন, ‘সেদিন গ্রেনেড হামলায় জ্ঞান হারানোর পর আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে ফেলে রাখেন। লাশঘরে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফখরুল আলম সমর ও সাংবাদিক কামরুজ্জামান খান আমাকে শনাক্ত করে প্রথমে নিয়ে যান ধানমণ্ডির নিবেদিতা নার্সিং হোমে।’

তিনি বলেন, ‘ওই রাতেই আমাকে নিয়ে আসা হয় মহাখালীর মেট্রোপলিটান হাসপাতাল এবং পরদিন সকালে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। পরে আহত অবস্থায় আমাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে। ঘটনার ২৫ দিন পর পিয়ারলেস হাসপাতালেই আমার জ্ঞান ফেরে।’

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চের সামনে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভির রহমানের পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনছিলেন মাহবুবা পারভীন।

দিনটির ভয়াল অভিজ্ঞতার কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মাহবুবা পারভীন জানান, সেদিন আইভী রহমানের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। স্থানীয় এক নেত্রী তাকে ডাক দিলে আইভি রহমানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি সেখানে যান। ঠিক সে সময়ই হঠাৎ বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরণ, তারপর আর কিছুই তার মনে নেই।

বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছর চিকিৎসা গ্রহণের পরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারিনি। শরীরে এখনও অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। প্রতি রাতেই স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠি। বেশি যন্ত্রণা হয় মাথায়। কেন না এখনও মাথায় দুটি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। সামনের কয়েকটি দাঁতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে, একটা কানে কিছু শুনতে পাই না।’

মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিশেষ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এককালীন ১২ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা পেয়েছি। আর জাতির জনক মেমোরিয়াল কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা পাচ্ছি। চিকিৎসা করিয়েই যাচ্ছি তবু পুরোপুরি সুস্থ হতে পারছি না।’